২০২২ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখী হয় সিলেটের মানুষ । সেই ক্ষত শুকানোর আগেই ফের বন্যায় প্লাবিত এখানকার অধিকাংশ জনপদ । এবছরও এক মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফা বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এই অঞ্চলের বাসিন্দারা।
পরিবেশবিদ, হাওরাঞ্চলের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বললে তারা জানান , নানা কারণে প্রতিবছর সিলেটে বন্যা দেখা দেয় । যেমন, প্রাকৃতিক জলাধার বেদখল, অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট, বাঁধ ও সড়ক নির্মাণ ,আবাসনের জন্য যত্রতত্র একের পর এক গ্রাম তৈরি , এসব কারণে নদী আর হাওর সংযোগহীন হয়ে পড়েছে। তাই পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ রুদ্ধ হচ্ছে। নদীর পাশাপাশি সিলেটের হাওরগুলোও নাব্যতা হারিয়েছে। সেই সাথে ভারত থেকে নেমে আসা পানি সিলেটে বন্যার অন্যতম কারণ বলেও তারা মনে করছেন।
সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কুদ্দুস বুলবুল জানান, বন্যা দুর্গতদের পাশে আমরা আছি । ত্রাণ সাম্রগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে । বারবার কেন বন্যা হচ্ছে এর সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজে বের করে স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনা সরকারের আছে ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল করিম চৌধুরী কিম বলেন , সিলেটের পাশেই ভারতের মেঘালয় । যেখান থেকে অনেক নদী সিলেটে এসে পড়েছে। মেঘালয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । বৃষ্টির পানির সাথে প্রচুর পরিমাণে বালু ও কাদামাটি সিলেটের নদ-নদী ও হাওরগুলোতে এসে পড়ছে , ফলে এগুলো দিনদিন ভরাট হয়ে নাব্যতা হারাচ্ছে। একই সাথে কমে গেছে পানির ধারণ ক্ষমতাও । এছাড়াও সিলেট মহানগরীর উন্নয়ন প্রকল্পেও সমস্যা আছে বলে মনে করে কিম জানান, প্রতিবছর এই বন্যার কবল থেকে সিলেটবাসীকে রক্ষা করতে হলে নদী খননসহ দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরী ।
সিলেট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান জানান, নদীগুলো ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে এসেছে। এছাড়াও অতিবৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পানিসহ নানা কারণে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। সিলেটের এই বন্যার মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী এবং দলীয় নেতারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী সিলেটের ব্যাপারে বরাবরই আন্তরিক । আশা করি ভাল কিছই হবে ।