বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আবারও নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, বাংলাদেশের জনগণের মতোই যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকির বিষয়টিও উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, কূটনীতিকদের ওপর হামলা ও সহিংসতার হুমকি অগ্রহণযোগ্য। এছাড়া পিটার হাসকে হুমকির ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্র বারবার উদ্বেগ জানিয়েছে বলেও ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদ-বিক্ষোভ উপেক্ষা করে ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। স্পষ্টতই সমস্ত রাজনৈতিক দল এটি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন চলছে। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ঐকমত্যের আহ্বান জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এবং সরকারকে জবাবদিহি করতে আপনার অবস্থান কী?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে আমরা ধারাবাহিক যে বার্তা দিয়ে এসেছি এবং ভোটের দিন ঘোষণার পরও এখনও সেই বার্তাই রয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের জন্য যা চায় যুক্তরাষ্ট্র ঠিক সেটিই চায়: (আর সেটি হচ্ছে) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশে আলাদা করে কোনও একটি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না; আমরা একটি রাজনৈতিক দলের ওপর অন্য রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দিই না। আমরা সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শন, সহিংসতা এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই।
পরে ওই সাংবাদিক বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকির বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের কাছ থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা সবাই একই সুরে কথা বলছেন, রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করতে চাইছেন। রাষ্ট্রদূত নিজেই গতকাল তার নিরাপত্তা এবং তাদের কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি এই ধরনের হুমকি ও হিংসাত্মক বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেন?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এই মুখপাত্র বলেন, বিদেশে থাকা আমাদের কূটনীতিকদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা অবশ্যই আমাদের – আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যে কোনও হুমকিকে খুব গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। আমাদের কূটনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি অগ্রহণযোগ্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার বাংলাদেশ সরকারের কাছে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক হুমকিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে মার্কিন কূটনৈতিক মিশন এবং কর্মীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবং আমরা আশা করি তারা সেই দায়িত্ব পালন করবে।