অনিয়মিত উপস্থিতি, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করাসহ নানা কারণে যুক্তরাজ্যের ১৬টি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও এজেন্সিগুলোকে এই ১৬টি ইউনিভার্সিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী না নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থী না নেয়ার ঘোষণাকে বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের স্টাডি গ্রুপ, রাসেল গ্রুপ, নাভিটাস, অক্সফোর্ড, ইনটু গ্রুপসহ বিভিন্ন গ্রুপের অধীনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইউনিভার্সিটি রয়েছে। এর মধ্যে এশিয়ার দেশগুলো থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্টাডি গ্রুপ, অক্সফোর্ড গ্রুপ, ইনটু গ্রুপ ও নাভিটাস গ্রুপের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে পড়তে আসেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও এসব গ্রুপের মাধ্যমে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসেছেন।
বাংলাদেশ থেকে আসা কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই অভিযোগ ছিল ইউনিভার্সিটিতে নিয়মিত উপস্থিত না হওয়া ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার। এছাড়া অনেকের বিরুদ্ধে শিক্ষাজীবন শুরু করার আগেই দেশত্যাগ, ভিসা বদল, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করারও অভিযোগ ছিল। ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এজেন্টদের চিঠি দিয়েও বিষয়গুলোর সুরাহা করতে পারেনি। উল্টো এজেন্সির কর্মকর্তারা শিক্ষার্থীদের অবস্থানই নিশ্চিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে।
দেশত্যাগ, ভিসা বদল, রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন, শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ইউনিভার্সিটিগুলো। এছাড়া রেটিং সমস্যায়ও পড়েছে এসব ইউনিভার্সিটি।
এমন অবস্থায় মাস ছয়েক আগে ঘোষণা না দিয়ে লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটি ও সিলেটের দুটিসহ বাংলাদেশের ৫টি ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থী নেয়া বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি স্টাডি গ্রুপের ১৩টি ইউনিভার্সিটিসহ ১৬টি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ব্যাপারে কঠিন অবস্থান নেয়। চলতি সপ্তাহ থেকে কার্ডিফ ইউনিভার্সিটি, ডারহাম ইউনিভার্সিটি, কিংস্টন ইউনিভার্সিটি, ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটি, লিডস ইন্টারন্যাশনাল স্টাডি সেন্টার, লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটি, রয়্যাল হলওয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, টিসাইড ইউনিভার্সিটি, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, অ্যাবারডিন ইউনিভার্সিটি, হাডার্সফিল্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ হাডার্সফিল্ড লন্ডন, স্ট্র্যাথক্লাইড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ সারে, সাসেক্স ইউনিভার্সিটি ও কভেন্টি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী না নেয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছে। বিষয়টি তারা শিক্ষার্থী ও এজেন্সিগুলোকে জানিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করে এমন ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে আসতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন।
এজেন্সি সংশ্লিষ্টরা জানান, যারা ইন্টারভিউতে পাস করেছেন, টাকা জমা দিয়েছেন এবং অ্যাম্বেসিতে ভিসার আবেদন করেছেন, তাদের ইউনিভার্সিটি থেকে ই-মেইল দিয়ে বলা হচ্ছে আবেদন প্রত্যাহার করতে। সঙ্গে টাকা ফেরত নেয়ারও আবেদন করতেবলা হচ্ছে।
ইউনিভার্সিটিগুলো থেকে বলা হয়েছে, নতুন করে কেউ আর ভিসা পাবেন না। জমা দেয়া পুরো টাকা ফেরত পাবেন শিক্ষার্থীরা।
লন্ডনের এসএ এক্সপ্রেস’র পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, স্টাডি গ্রুপের ১৩টিসহ ১৬টি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে আর কোনো শিক্ষার্থী নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে এসব ভার্সিটিতে পড়াশোনার জন্য আর কোনো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভিসা পাবেন না। এর মূল কারণ হচ্ছে অনিয়মিত উপস্থিতি, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা তথা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ না নেয়া। এজেন্সি হিসেবে আমরাও চাপে আছি।
তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থী রাজনৈতিক আশ্রয় চায়, ওয়ার্ক পারমিটে ভিসা সুইচ করে, কিন্তু আমাদের জানায় না। ইউনিভার্সিটিতে অনিয়মিত হলে কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিষয়ে। আমরা তাদেরকে শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারি না।
যুক্তরাজ্যের লুটন টাউনের বাসিন্দা মাহবুবুল করিম সুয়েদ বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর কারণে অন্যদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।