বলাৎকারের প্রতিশোধ নিতে গৃহশিক্ষককে খুন, যুবক গ্রেফতার

ইফতেখার রশিদ মাহিকে (২২) দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রাইভেট পড়াতেন তার গৃহশিক্ষক মুক্তারুল হক। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় জোরপূর্ব ভয়ভীতি দেখিয়ে মাহিকে বলাৎকার করেন শিক্ষক মুক্তারুল। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে মাহিকে বলাৎকার করে আসছিলেন তিনি।

যুবক বয়সে এসেও মাহিকে জোরপূর্বক বলাৎকারের চেষ্ঠা করেন ওই গৃহশিক্ষক। তাতে রাজি না হওয়ায় মাহির ছোট বোনকে ‘নষ্ট’ করার হুমকি দেন মুক্তারুল। এর প্রতিশোধ নিতে কাঠের বর্গা মাথায় আঘাত করে গৃহশিক্ষক মুক্তারুলকে হত্যা করেন মাহি।

নিহত মুক্তারুল হক জৈন্তাপুরের তেলীজুরী গ্রামের রহমত আলীর ছেলে। অভিযুক্ত মাহি একই গ্রামের বজলুর রশিদ শামীমের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের দেড় বছর পর সোমবার (১৩ মে) পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে মুল আসামী মাহিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর পিবিআই’র জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনা দেয় মাহি।

মঙ্গলবার (১৪ মে) তাকে আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালে ৪ ডিসেম্বর সকালে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার তেলীজুরী এলাকায় সিলেট-তামাবিল সড়কের পাশ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুক্তারুল হকের (৩৬) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের পিতা রহমত আলী বাদী হয়ে ০৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে জৈন্তাপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কিছুদিন তদন্তের পর তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই সিলেট জেলা।

পিবিআই জানায়, ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের পর সোমবার (১৩ মে) অভিযান চালিয়ে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়াস্থ একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে মূল আসামী ইফতেখার রশিদ মাহি (২২) কে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে মাহি পিবিআইকে জানায়, মুক্তারুল তাকে দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে প্রাইভেট পড়াতো। সে যখন পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ত তখন থেকে মুক্তারুল তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলৎকার শুরু করে। পাশাপাশি অশ্লীল দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। বিভিন্নসময় বাঁধা দিলে তাকে ব্লেড দিয়ে দুই উরুতে অসংখ্য জখম করে। অশ্লীল দৃশ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে এবং স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে তাকে দীর্ঘ বছর যাবৎ বলৎকার করে আসছিল গৃহশিক্ষক মুক্তারুল।

জিজ্ঞাসাবাদে মাহি আরও জানায়, শেষ পর্যায়ে যুবক বয়সে এসেও তাকে বলাৎকার করতে চাইলে সে বাঁধা দেয়। এসময় মুক্তারুল মাহির নবম শ্রেণী পড়ুয়া ছোট বোনকে ‘নষ্ট’ করার হুমকি দেয়। তা সহ্য করতে না পেরে মুক্তারুলকে খুন করার পরিকল্পনা করে মাহি। ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর অতীতের মত মুক্তারুল মাহিকে তাদের বাড়ির পিছনে বলৎকারের উদ্দেশ্যে ডাকলে মাহি সন্ধ্যার পর সেখানে যায় এবং সেখানে থাকা কাঠের বর্গা দিয়া মুক্তারুলের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে। এরপর মৃতদেহ তার বাড়ির রাস্তার পাশে জমিতে টেনে হেছড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। তারপর মাহি বাড়িতে এসে পুকুরে গোসল করে নফল নামায পড়ে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপের আর্জেনটিনার খেলা দেখে। পরদিন সে রামপ্রসাদ গ্রামে তার নানাবাড়ি চলে যায়। এর কিছুদিন পর খালার বাড়ি থেকে ঢাকায় গিয়ে একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয় সে। এরপর আর এলাকায় আসেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র উপপরিদর্শক ঝলক মোহন্ত বলেন, ঘটনার তদন্তভার পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি সহযোগীতায় ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়। পরে সোমবার (১৩ মে) অভিযান চালিয়ে ঢাকার মালিবাগ চৌধুরীপাড়াস্থ একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে মূল আসামী ইফতেখার রশিদ মাহি (২২) কে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার তাকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।