হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে এবার বরই বা কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে ভালো দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা। বরই চাষে ভাগ্য বদল হচ্ছে চাষিদের।
কুল বরই সাধারণত উঁচু এবং উষ্ণতম অঞ্চলে ভালো ফলন হয়। উপজেলায় আগে আপেল কুল ও বাউ কুলের চাষ হলেও এখন নতুন জাত কাশ্মীরি আপেল কুলের চাষ বেড়েছে। প্রচলিত আপেল কুল ও বাউ কুলের চেয়ে আকারে বেশ বড় এই কাশ্মীরি আপেল কুল। নতুন এ জাতের কুল চাষ করে সফল হয়েছেন অনেকেই। সেজন্য আপেল কুল বা বাউকুলের পরিবর্তে উপজেলায় বাড়ছে কাশ্মিরী কুল ও বল সুন্দরী কুলের চাষ।
কাশ্মিরী বা বল সুন্দরী কুল আকারে বড়, অধিক মিষ্টি, রসালো, পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং ফলনও হয় বেশ ভালো। তাই কৃষকরা এই কুল বড়ই উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন বেশি।
উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কুল চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, পেয়ারা চাষে একবারই ভালো ফলন হয়। কিন্তু কাশ্মিরী কুল চাষে কয়েকবার ফলন পাওয়া যায়। সহজেই পরিচর্যা করা যায়। উৎপাদন খরচ কম, আবার পোকার উপদ্রব তেমন নেই। ফলন বেশি, খেতেও সুস্বাদু।
আরেক কুল চাষি বলেন, চার বন্ধু মিলে ৭ বিঘা জমিতে কুলের চাষ করেছি। থোকায় থোকায় বল সুন্দরী কাশ্মীরি আপেল কুল ধরেছে। প্রতি গাছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি করে কুল বড়ই পাওয়া যাবে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা। বর্তমান বাজার দর হিসাবে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রায় ৯-১০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করা সম্ভব।
কুল চাষি মুজিবুর রহমানের কুল বাগানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নতুন জাতের এই কুলের গাছে থোকায় থোকায় কাশ্মীরি আপেল কুল। তার বাগান ভরে গেছে কুলে। ফলের ভারে গাছগুলো মাটিতে প্রায় নুয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বাগানে কুল তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
অল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় কুল চাষে ঝুঁকেছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। তেমনি এক কৃষি উদ্যোক্তা নুরুল আমিন বলেন, আমার একটি খামার রয়েছে। তাতে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস, মুরগী, গরু, ছাগল ও কয়েক রকমের পাখি রয়েছে। আমার পাশের গ্রামে মুজিবুর রহমান চাচার এই কুল বাগানে এসে আমার মনে হলো, আমি যেগুলো করছি তার পাশাপাশি যদি এই কুল চাষ করতে পারি তাহলে তো আরও বেশি লাভবান হতে পারব। যেহেতু কুল চাষে স্বল্প খরচে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়, তাই ইনশাআল্লাহ আমিও কুল চাষ শুরু করবো।
নবীগঞ্জে এবার দীঘলবাক ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কুল বরইয়ের বাগান গড়ে উঠেছে। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি আড়ৎগুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে নবীগঞ্জের সুস্বাদু এই কুল বরই। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে কিনে ট্রাকে বোঝাই করে নিয়ে যান এই কুল।
নবীগঞ্জ উপজেলার কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা মাকসুদুল আলম বলেন, উঁচু এবং উষ্ণতম অঞ্চলগুলোতে কুল চাষ ভালো হয়। সেদিক থেকে নবীগঞ্জে ভালো কুল চাষ হয়ে থাকে। গত বছরের তুলনায় এবার কুলের ভালো ফলন হয়েছে। তাছাড়া খরচ কম হওয়ায় অন্যান্য বাগানের তুলনায় কুল বাগানের সংখ্যাও বাড়ছে। ভালো মানের কুল উৎপাদনে চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং সঠিক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যার কারণে কুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেশ কয়েক জাতের আপেল ও বল সুন্দরী কুলের বাম্পার ফলন হয়েছে।