সুনামগঞ্জে বন্যায় সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় ১৮শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
বুধবার (২৯ জুন) জেলার কয়েকটি সড়ক ঘুরে দেখা যায় বিধ্বস্তের চিত্র। জেলায় সুরমা নদীর পানি গত কয়েকদিন ধরে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনও অনেক সড়ক পানির নিচে ডুবে রয়েছে। বানের জলে জেলার প্রধান সড়কগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা।
বন্যার পানিতে সড়ক ভেঙে জেলা সদরের সাথে এখনও সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে দোয়ারা বাজার, জামালগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলার। অনেক সড়কের ভাঙা স্থানে সাঁকো বানিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে লোকজনকে। পার হওয়ার পর জেলা সদরে আসার জন্য আবার অন্য গাড়িতে উঠতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, দ্বিতীয় দফা ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছিল সুনামগঞ্জ জেলার রাস্তাঘাটসহ সকল ঘরবাড়ি। সারা দেশের সাথে সুনামগঞ্জ জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় ৫ দিন। একই সাথে জেলা সদরের সাথে জেলার সকল উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
অনেক সড়ক ভেঙে খালের মতো হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কয়েক লক্ষ মানুষকে। শুধু তাই নয়, অনেক সড়কে পায়ে হেঁটে চলাচলও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
বিশ্বম্ভপুর উপজেলার বাসিন্দা মনফর আলী বলেন, বন্যার পানিতে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষের জন্য হেঁটে চলাচল করাও খুব কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ শহরের রাধানগর এলাকার বাসিন্দা ছমির উদ্দিন বলেন, আমাদের ঘর-বাড়ি বন্যার পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এখন যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করব সেটারও সুযোগ নেই। একজন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতে সে মরে যাবে!
তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটা খারাপ হয়েছে যে এখন একজন রোগীকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সে মারা যাবে! আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত যাতে রাস্তাঘাট মেরামত করে দেওয়া হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আনুমানিক তথ্য অনুযায়ী জেলার প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই বন্যার পানিতে তলিয়ে প্রায় ১৮শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও অনেক সড়ক এখনও পানির নিচে রয়েছে। সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়ক মেরামত করা হবে।
এলজিইডি সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম বলেন, বন্যায় সড়কের নজিরবিহীন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৪ হাজার ৫৭১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৫শ কোটি টাকা। এখনও অনেক সড়ক পানির নিচে রয়েছে।
আর সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ৩৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।