ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মহাবিপদে পড়েছে পোষা ও বন্যপ্রাণীরা। নষ্ট হচ্ছে গো-খাদ্য ও বন্য পশু-পাখিদের আবাস ও খাবার ব্যবস্থা। ১২২ বছরের রেকর্ড ভাঙা এই বন্যায় প্রাণিসম্পদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে ও হচ্ছে, সেটি নিরুপণের কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যায় সবার নজর থাকছে মানুষ ও সম্পদের ক্ষতির দিকে। পশু-পাখিদের জীবন এবং পরিবেশও যে হুমকির মুখে, সেটি দেখার কেউ নেই।
ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যা ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। উজানের সেই পানি প্রবেশে করছে সীমান্তবর্তী সিলেটে। সেইসঙ্গে কয়েকদিন টানা ভারী বর্ষণ। এতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে।
এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগতভাবে গড়ে ওঠা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি ও হাঁসের খামার ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। বন্যার কারণে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যাটা তুলনামূলক কম। তবে খড়-কুটো ও উন্নত জাতের চাষ করা ঘাসসহ খাদ্য ব্যবস্থাপনা পড়েছে হুমকির মুখে।
রবিবার (১৯ জুন) জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের সবগুলো উপজেলাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ৭২টি ইউনিয়নে প্লাবিত চারণভূমির পরিমাণ ৫ হাজার ৭৭৪ একর। গবাদি খামার, হাঁস-মুরগির খামার, কৃষি ভূমি ও দানাদার খাদ্য, নষ্ট খড় ও ঘাস ও মৃত পশু-পাখি মিলিয়ে মোট ক্ষতি আড়াই কোটি টাকারও বেশি।
বন্যায় সিলেটে ক্ষতিগ্রস্ত মোট গরুর সংখ্যা ২ লাখ ৮১৩টি, মহিষ ২৬ হাজার ৮৭৭টি, ছাগল ৪৮ হাজার ৪১১টি, ভেড়া ১৮ হাজার ১৫৫, মুরগি ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৯টি ও হাঁস ২ লাখ ৪৪ হাজার ১৯২টি।
এর মধ্যে মারা গেছে— গরু ১১টি, মহিষ ৫টি, ছাগল ২৪টি, ভেড়া ১০টি, মুরগি ২ হাজার ৭১৫টি ও হাঁস ৪৯১টি।
জেলায় গবাদি পশুর খামারের সংখ্যা ৭৪৫। গবাদি পশু আছে ৩০ হাজার ৭৩টি। হাঁস-মুরগির খামারের সংখ্যা ৩৩৫ এবং হাঁস-মুরগির সংখ্যা ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৩১টি।
নষ্ট হওয়া খড়ের পরিমাণ ১ হাজার ৯৩৪ টন, যার আনুমানিক মূল্য ৯৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ঘাসের পরিমাণ ২ হাজার ৯৬১ টন, যার দাম প্রায় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৫ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার (১৯ জুন) জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রুস্তম আলী বলেন, গো-খাদ্যসহ প্রাকৃতিক খাবারে সমস্যা বেশি। ক্ষয়ক্ষতির আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। বন্যা শেষ হলে মোট হিসাব বলা যাবে। এ ছাড়া বন্যপ্রাণীদের ক্ষতির বিষয়টি তো আছেই।’
প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা কবলিত এলাকার গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী, পাখি, পোকামাকড় মিলিয়ে বাস্তুসংস্থান মহাবিপদে রয়েছে। পশু-পাখির বাসস্থান, চিরণ ও খাদ্যে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বন্যার্ত মানুষের সাহায্যে নানা সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এগিয়ে এলেও এদের দেখার কেউ নেই।
এ বিষয়ে জেলা বন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সরকারি ওয়েবসাইটেও কোনও তথ্য মেলেনি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রবিবার (১৯ জুন) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিম্যাল নিউট্রেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বন্যায় বন্যপ্রাণী, পাখি ও পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় খাদ্য সংকট ও বাসস্থানের। এ ছাড়া পশু-পাখির স্বাভাবিক প্রজনন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বংশবিস্তারেও সমস্যা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, খাবারের জন্য বানরসহ বিভিন্ন প্রাণী লোকালয়ে চলে আসে প্রায়ই। সিলেটের ইকোপার্কেও এমনটি দেখা যায়। এখন বন্যার কারণে এ সংকট আরও প্রকট হবে। আমাদের ছাত্র-শিক্ষকদের সংগঠনগুলো এ নিয়ে কাজ করলেও পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে বনে-জঙ্গলে যাওয়া যাচ্ছে না।
তথ্যসূত্র: বাংলা ট্রিবিউন