স্টেশন মাস্টার সংকটের অজুহাতে একের পর এক বন্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়া কুলাউড়া উপজেলার ৫টি রেল স্টেশন চালুর কোনো উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে লোকাল ও আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রীদের।
সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনের কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত ৭টি স্টেশনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৫টি স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ট্রেন ক্রসিং বিড়ম্বনা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। এমনকি বন্ধ হয়ে গেছে ডেমুসহ ৩টি লোকাল ট্রেন। যার ফলে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা ভোগান্তি কমাতে বাধ্য হয়ে সড়ক পথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া আসা করছেন। এতে বড় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে রেল বিভাগ।
জানা যায়, উপজেলার টিলাগাঁও, ভাটেরা, মনু, ছকাপন ও সর্বশেষ ২ মাস আগে থেকে লংলা স্টেশনটি বন্ধ হয়ে গেছে। ভাটেরা ও টিলাগাঁও এই স্টেশন দুটি চালুর দাবিতে একাধিকবার এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। তবুও বিষয়টি কানে নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, দু’মাস ধরে বন্ধ রয়েছে কুলাউড়া উপজেলার লংলা রেলস্টেশন। এ স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন মাস্টার রজত রায়কে লংলা থেকে সিলেটের মোগলাবাজার স্টেশনে বদলি করা হয়। এর পর থেকে স্টেশনটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
বিশেষ করে লংলা ও ভাটেরা স্টেশন বন্ধ থাকার ফলে ক্রসিং বিড়ম্বনায় পড়েছে সিলেট-ঢাকা ও চট্রগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন। সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের অন্যতম লংলা, টিলাগাঁও, মনু ও ভাটেরা স্টেশনগুলো নিরব। নেই কোনো কোলাহল বা যাত্রী। যেন এক ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে স্টেশনগুলোতে।
লংলা স্টেশন এলাকার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দুই মাস ধরে মাস্টারের অভাবে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। স্টেশন চালু থাকা অবস্থায় লোকাল মেইল ট্রেন স্টেশনে থামলে যাত্রীরা মালামাল নিয়ে অনায়াসে ট্রেনে যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এখন স্টেশন বন্ধ থাকায় একমাত্র লোকাল মেইল ট্রেনটি মেইন লাইন দিয়ে এসেই হুইসেল দিয়ে চলে যায়। এতে অনেক যাত্রী তাড়াহুড়ো করে উঠানামা করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।
অপরদিকে, মাস্টার না থাকায় এসব স্টেশনের ক্রসিং সিস্টেম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ওয়ানওয়ে লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। সবচেয়ে বেশি ক্রসিং বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। স্টেশন চালু থাকা অবস্থায় সিলেটমুখী যে কোনো ট্রেন শমশেরনগর স্টেশন থেকে ছেড়ে এলে এবং কুলাউড়া থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা বা চট্টগ্রামমুখী যেকোনো ট্রেনকে মধ্যবর্তী লংলা স্টেশনে দাঁড় করিয়ে ক্রসিং দেয়া হতো। বর্তমানে স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শমশেরনগর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা সিলেটমুখী যেকোনো ট্রেনকে কুলাউড়া রেলস্টেশনে অথবা কুলাউড়া রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ঢাকা বা চট্টগ্রামমুখী ট্রেনগুলোকে শমশেরনগর স্টেশনে ক্রসিং নিতে হয়। উভয় স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার।
এদিকে এই সিলেট আখাউড়া সেকশনে ডেমু, কুশিয়ারা এক্সপ্রেস এবং মিক্স ট্রেন নামে ৩টি এবং সিলেট-চট্রগ্রাম লাইনে চলাচলকারী জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব ট্রেন বন্ধ হওয়ায় গুরুত্ব হারিয়েছে স্টেশনগুলো। সেই সাথে এসব স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। মানুষ বাধ্য হয়ে দুরবর্তী কুলাউড়া, শমসেরনগর কিংবা মাইজগাঁও সেটশন দিয়ে আন্ত:নগর ট্রেন যোগে বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করে থাকেন। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সিলেট আখাউড়া সেকশনে এক লোকাল ট্রেন চালুর দাবি এসব স্টেশন দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সারাদেশেই বর্তমানে স্টেশন মাস্টার সংকট রয়েছে বলে দাবি করেন সিলেট-আখাউড়া রেলওয়ে সেকশনের পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) তৌফিকুল আজিম।
তিনি জানান, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অনেক স্টেশন মাস্টারের অভাবে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। নতুন স্টেশন মাস্টার নিয়োগ দিলে এই সমস্যার সমাধান হবে। বছর খানেকের মধ্যে মাস্টার সংকটের সমস্যা সমাধান হবে এবং বন্ধ স্টেশনগুলো পুনরায় চালু করা হবে।