আজ (২৭ নভেম্বর) চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০২২ সালের এই দিনে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত কনভেনশনের মাধ্যমে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়।
সংগঠনটির ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ (২৭ নভেম্বর) সকাল ৯ টায় খাদিম চা-বাগানে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের আহবায়ক এবং খাদিম চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শ্রমিকনেতা সবুজ তাঁতির সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় সংগঠক মনীষা ওয়াহিদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খাদিম বাগানের চা-শ্রমিক নেতা রহিমা খাতুন, সমন্বয়ক এসএম শুভ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১০ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ না করায় ন্যাশনাল টি কোম্পানির চা-বাগানের শ্রমিকদের পরিবার দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ফাড়ি বাগানসহ ১৯ টি বাগানের ১৬ হাজার চা-শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। কিন্তু সরকারি মালিকানাধীন বাগান হওয়া সত্ত্বেও এতদিন অতিবাহিত হলেও মজুরি পরিশোধে এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাবেশে বক্তারা বলেন, যদি অনতিবিলম্বে চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করে বাগান চালু করা না হয় তাহলে হাজার হাজার চা-শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, চা-শ্রমিকের মজুরি শ্রম আইন ও গেজেট অনুযায়ী ৫% ইনক্রিমেন্ট অর্থাৎ সাড়ে আট টাকা বৃদ্ধি করা হলেও এখনো পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে মূল মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ২০২৩-২৪ সালে চা-শ্রমিকদের মজুরি বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে মালিকদের টালবাহানা সহ্য করা হবে না উল্লেখ করে সংগঠনের সমন্বয়ক এসএম শুভ বলেন, চা-শ্রমিকদের ২০২৩-২৪ সালের মজুরি বৃদ্ধির চুক্তি এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নিশ্চিত করতে হবে এবং একই সাথে ২০২১-২২ সালের বকেয়া মজুরি ২০,০০০ টাকাও পরিশোধ করতে হবে। চা-শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে উপার্জিত টাকা মালিকদের আত্মসাৎ করতে দেয়া হবে না।
সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, সারা পৃথিবীর শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মুক্তির সংগ্রামের অংশ চা-শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই। যুগে যুগে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করেই শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায় করে চলেছেন। চা-শ্রমিকরাও মজুরি বৃদ্ধি সহ নাগরিক অধিকার আদায়ে লড়ছেন। সেই লড়াইয়ে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা আপনাদের পাশে আছে। এ লড়াইকে শোষণমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রামে পরিণত করতে হবে।
সবাইকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের আহবায়ক সবুজ তাঁতি বলেন, চা-শ্রমিকদের প্রতিটি লড়াইয়ে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বকেয়া মজুরি আদায়ে ঢাকায় শ্রম ভবন ঘেরাও, গেজেট বাতিল, মজুরি বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকদের সংকট নিরসনে আমাদের সংগঠন নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। একইসাথে বিভিন্ন চা-বাগানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ত্রাণ সহযোগিতাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।
চা-শ্রমিকদের মুক্তির সনদ ১০ দফা বাস্তবায়নের সংগ্রামকে বেগবান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত হয়। সমাবেশের পূর্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি বাগানের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।