ওদের কারো ঝুলিতে আছে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার, কারো আছে হয়তো স্কুলের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় নানা অর্জন। কিন্তু বই পড়ে পুরস্কার অর্জন এই প্রথম। তাই এ প্রাপ্তির আনন্দও অন্যরকম হয়ে উঠল তাদের কাছে। মাইক্রোফোনে নাম ঘোষণার সাথে সাথেই আসন ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠল তারা। আবেগে-উত্তেজনায় কারো মুখে কথা নেই, কারো চোখ ছলছল আনন্দ অশ্রুতে। মুক্তিযুদ্ধের বই পড়ে পুরস্কার অর্জনে ওদের মুখাবয়ব জানান দিলো, ওদের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন এ দেশটাকে নিয়ে।
দৃশ্যটি আজ শনিবার (১১ মার্চ) জেলা পরিষদ, সিলেট-ইনোভেটর বইপড়া উৎসবের পুরস্কার প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে বইপড়া উৎসবের এবারের আসরের শ্রেষ্ঠ পাঠক এবং সেরা পাঠকের পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদানের আগে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
জেলা পরিষদ, সিলেট এবং ইনোভেটর এর যৌথ আয়োজনে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদ, সিলেটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান।
এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ, সিলেট এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সিংহ এবং বইপড়া উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা, ইনোভেটর এর মুখ্য সঞ্চালক, সিটি কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বইপড়া উৎসবের প্রধান উদ্যেক্তা এবং ইনোভেটর এর নির্বাহী সঞ্চালক প্রণবকান্তি দেব।
ইনোভেটর এর যুগ্ম সমন্বয়ক সুমিতা দাস এবং ঈশিতা ঘোষ চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য অনুশীলনে বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে জ্ঞান-প্রজ্ঞার অধিকারী তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি জ্ঞানের নানাবিধ শাখায় বিচরণ করতে হবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বইপড়া উৎসব মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক ও বাহক একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
ইনোভেটর এর সমন্বয়ক আশরাফুল ইসলাম অনির পরিচালনায় গীতবিতান বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বইপড়া উৎসবের সমাপনী আয়োজন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিলেট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও সদস্য মতিউর রহমান মতি, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি শামসুল আলম সেলিম, লেখক ও সংগঠক মাহবুবুজ্জামান চৌধুরী এবং রাখালগঞ্জ কে সি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌরপদ দত্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠানের পর ইনোভেটর এর প্রধান সমন্বয়ক প্রভাষক সুমন রায়ের পরিচালনায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর স্কুল পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ পাঠক’ পুরস্কার অর্জন করেছে বর্ডারগার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঈশানা সরকার। এছাড়া ‘সেরা পাঠক’ পুরস্কার অর্জন করেছে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রান্ত চৌধুরী, বুরুঙ্গা ইকবাল আহমেদ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. আবিদা আক্তার রিপা, ব্লু বার্ড হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইসা শাহানা হোসেন, রাখালগঞ্জ কৈলাশ চন্দ্র হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত নুরিন তমা, সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাওশিন তাবাসসুম এবং একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিছা উদ্দিন।
কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘শ্রেষ্ঠ পাঠক’ পুরস্কার অর্জন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার রাখি। এছাড়া ‘সেরা পাঠক’ পুরস্কার অর্জন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সায়্যিদাতুন নিসা, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজের শিক্ষার্থী তিনা চৌধুরী এবং বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আলী আব্বাস।
পুরস্কার প্রদান পর্বের শুরুতে ইনোভেটরের রীতি অনুযায়ী বিগত আসরের বিজয়ীরা এবারের বিজয়ীদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করেন। পরে অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র, মেডেল, ক্রেস্ট এবং বই তুলে দেন।