ফ্রান্স-মরক্কো ও গৌরবের দূরত্ব আর মাত্র দুই ম্যাচ। ফাইনালে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে আজ বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় দুই দল দ্বিতীয় সেমিফাইনাল খেলতে নামছে।
যে দলই জিতুক না কেন, হয়ে যাবে ইতিহাস। জিততে পারলে ৬০ বছরের ইতিহাসে প্রথম ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ফাইনালে খেলবে ফ্রান্স। আর এরই মধ্যে প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে ওঠা মরক্কো জিতলে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে নিজেদের নাম লিখবে।
এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্স দাপট দেখিয়েছে শুরু থেকে। অস্ট্রেলিয়া ও ডেনমার্ককে হারানোর পর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ তারা অবশ্য হেরেছিল দ্বিতীয় সারির দল নামিয়ে। সবার আগে শেষ ষোলো নিশ্চিত করা দলটি তিউনিসিয়ার কাছে হেরে গ্রুপ পর্বের পর্দা নামায়। এরপর শেষ ষোলোতে সহজেই হারায় পোল্যান্ডকে। আর ইংল্যান্ডের হার না মানা লড়াই থামিয়ে চমৎকার জয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স।
অন্যদিকে মরক্কো যেন এক আরব্য রজনীর গল্প। কাতারে একমাত্র অপরাজিত দল হিসেবে তারা সেমিফাইনালে খেলতে নামছে। ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর বেলজিয়াম ও কানাডাকে হারিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলোতে ওঠে ১৯৮৬ সালের পর প্রথমবার। আর নকআউটে উঠে যেন আরও ভয়ঙ্কর অ্যাটলাসের সিংহখ্যাত এই আরবীয় দল। ১২০ মিনিটে কোনও গোল না খেয়ে স্পেনকে টাইব্রেকারে হারায়, সেখানেও কোনও গোল হজম করেনি। তাতে ক্ষান্ত হয়নি তারা। পরে পর্তুগালের বিপক্ষে ১-০ গোলে কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে গড়লো ইতিহাস।
এবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে খেলা। মরক্কো কি টানা তৃতীয় ম্যাচে অঘটন ঘটিয়ে দেবে? কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই জানেন, সেটা কঠিন। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে দোষ নেই। মরক্কোর কোচ বললেন, ‘টুর্নামেন্টে যত এগিয়ে যাবো, পরিস্থিতি তত কঠিন হয়ে উঠবে। আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি, যাদের বিশ্বমানের খেলোয়াড় ও একজন ভালো কোচ, সম্ভবত বিশ্বসেরা কোচ আছে। আমরা কী করতে পারি, সেটাতেই আমাদের ফোকাস থাকবে। আমরা আমাদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাবো এবং আরেকটি অঘটনের চেষ্টা করবো।’
পর্তুগালকে হারিয়ে নিজেদের ‘বিশ্বকাপের রকি বিলবাও’ ঘোষণা দেন রেগরাগুই। একের পর এক চমক দেখানো দলটির মনোবল তুঙ্গে আছে। দেশ থেকে হাজার হাজার সমর্থকদের দোহায় নিয়ে আসতে বিশেষ ফ্লাইট চালু করেছে মরক্কোর সরকারি বিমান সংস্থা। সব ভবিষ্যদ্বাণীকে ভুল প্রমাণ করে এগিয়ে চলা মরক্কো এবার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়তে চায়।
কিলিয়ান এমবাপ্পে ও অলিভিয়ের জিরুদকে নিয়ে গড়া ফ্রান্সের শক্তিশালী আক্রমণভাগের কঠিন পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে মরক্কো। এখন পর্যন্ত তাদের রক্ষণ চিঁড়ে গোল করতে পারেনি কোনও প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়। কানাডার কাছে একমাত্র গোল খেয়েছে, তাও নিজেদের ডিফেন্ডারের আত্মঘাতীর কারণে।
প্রতিপক্ষকে স্বাভাবিকভাবে সমীহ করছেন ফ্রান্সের বিশ্ব জয়ী কোচ দিদিয়ের দেশ, ‘মরক্কোর রক্ষণ করার ক্ষমতা খুব ভালো। কিন্তু জিততে তাদের আক্রমণের সামর্থ্যও ভালো আছে, নয়তো তারা এতদূর আসতে পারতো না।’
দেশম ঠিকই বলেছেন, শুধু ডিফেন্সই নয়, বল দখলেও দারুণ অবস্থানে ছিল। পাঁচ ম্যাচে তারা বল নিজেদের পায়ে রেখেছিল ৩২.৪ শতাংশ। ড্রিবলিং ও গতি দিয়েও নজর কেড়েছে দলটি। আর গোলপোস্টের নিচে ইয়াসিন বোনো তো ছিলেন অদম্য। গোলে তাদের শট ছিল ১৩টি, গোল হয়েছে পাঁচটি। চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে এই পরিসংখ্যানে তারা পিছিয়ে থাকলেও জয়ের ক্ষুধাই তাদের এগিয়ে রাখছে।
রেগরাগুই বলেছেন, ‘আমরা এখনও ক্ষুধার্ত, অনেক। ফ্রান্স আমাদের কাছে বল রাখতে দিবে না কারণ তারা বল নিতে চাইবে। আমাদের তিন বা চারটি সুযোগ দরকার গোল করতে এবং প্রতিপক্ষকে বিদায় করতে। ফ্রান্স ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দর্শনীয় খেলা না খেললেও তারা ছিল কার্যকরী।’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ শতাংশ বল দখলে রাখলেও ফ্রান্সের আক্রমণভাগের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচ ওতটা সহজ হবে না মানছেন দেশ, ‘বিপদ তৈরি করতে আমাদের বল রাখতে হবে, কিন্তু পোল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের খেলায় দেখেছেন তারাই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বল রেখেছিল। তবে আমাদের পায়ে যখন বল থাকে, তখন প্রতিপক্ষকে চাপে থাকতেই হয়।’
এই ম্যাচ দিয়ে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন মরক্কোর দুই উইঙ্গার হাকিম জিয়েশ ও সোফিয়ানে বৌফল। মরক্কোর হয়ে বিশ্বকাপে রেকর্ড সংখ্যক সপ্তম ম্যাচ খেলতে যাচ্ছেন দুজন। কাউন্টার অ্যাটাকে তারা ফ্রান্সের রক্ষণের কঠিন পরীক্ষা নেবেন। তবে এই বিশ্বকাপের যৌথ সর্বোচ্চ গোলদাতা এমবাপ্পেকেও দিতে হবে অগ্নিপরীক্ষা। একবাক্যে বলা যায়, ইতিহাস গড়তে এই দুই দলের লড়াই হবে উত্তেজনায় ঠাসা। যে জিতবে, আগামী রোববার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে দাঁড়াবে আর্জেন্টিনার সামনে।