জগন্নাথপুর উপজেলা ভূমি অফিসে সদ্য বদলীর আদেশ হওয়া ফয়সল চৌধুরীর বিরুদ্ধে আবারও ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য ও অভিযোগ শাখা থেকে ১ বছরের মাথায় আবারও বদলি হয়ে জগন্নাথপুর উপজেলায় আসার খবরে ভুক্তভোগী জনসাধারণ সাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
রোববার (২৩ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক বরাবরে ২৫ জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়।
অভিযোগে জানা গেছে, জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলসের বাসিন্দা আবুল মনসুর মো. ফয়সল চৌধুরী অফিস সহায়ক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ের অফিস সহকারী হিসাবে যোগদান করে নানা অনিয়ম কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন ধরে থাকাকালে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। যেখানে টাকা ছাড়া কোনরকম সেবা কল্পনাই করা যাচ্ছিলো না।
প্রকাশ্যে প্রশাসনিক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন ফয়সল চৌধুরী। বারবার বদলি হলেও তিনি অদৃশ্য খুঁটির জোরে বহাল তবিয়তে থেকে চালিয়ে যান ঘুষ-বাণিজ্য।
তার বিরুদ্ধে উপজেলা চত্বরে থাকা সরকারি গাছ কাটার মাধ্যমে ফার্ণিচার তৈরির অভিযোগ রয়েছে। সরকারী নীতিমালা অমান্য করে মৎস্যজীবিদের নাম ব্যবহারের মাধ্যমে অমৎস্যজীবী প্রভাবশালীদের জলমহাল পাইয়ে দেয়ার নামে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি কোন কোন জলমহালে শেয়ার থেকেও লুটেছেন লাখ লাখ টাকা।
উপজেলার নলজুর নদীসহ কাটাগাং ও বিভিন্ন উন্মুক্ত জলাশয়ে এলাকার গরীব লোকজনের বেড় জাল থেকে মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে জাল প্রতি ১০ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন এই ফয়সল চৌধুরী।
জগন্নাথপুর বাজারের বড় দোকানগুলোর কাছ থেকেও মোবাইল কোর্টের ভয় দেখিয়ে সুবিধা নিতেন তিনি। নলজুর নদী খনন প্রকল্পের মাটি ঠিকাদারের এক কর্মচারীর মাধ্যমে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন অফিস সহকারী ফয়সলের বিরুদ্ধে। আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে রাণীগঞ্জ এলাকার অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালু মাটি উত্তোলন করিয়ে কমিশনের নামে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের পিআইসির কাছ থেকে বিল পাইয়ে দেয়ার নামে এবং বিভিন্ন অজুহাতে আদায় করতেন বড় অংকের টাকা।
তার বিরুদ্ধে অফিসে অভিযোগকারীদের ফাইল গায়েবের অভিযোগও রয়েছে। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে কাগজপত্র সরিয়ে ফেলার গুরুতর অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
জগন্নাথপুর গ্রামের অভিযোগ করে একলাছ মিয়া বলেন, ‘ফয়ছল চৌধুরী টাকার বিনিময়ে আমার কাগজ গায়েব করে ফেলেছে। সে দুর্নীতিবাজ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি।’
জগন্নাথপুর গ্রামের এয়াকুব আলী বলেন- ‘ফয়ছল চৌধুরী জগন্নাথপুরে অনেক দুর্নীতি করেছে। গরিবের পেটে লাথি মেরেছে। টাকা ছাড়া তিনি কিছুই করেন না।’
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গোপনীয় শাখার উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি স্যার মিটিংয়ে, শেষ হলে ফাইল দেওয়া হবে।’