ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘এসব সংঘাত ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার কারণে সাধারণ মানুষ ভুগছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগুলো বন্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় চামড়া খাতের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদারগুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো’ বা ব্লিস-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন নানা সমস্যা। এক যুদ্ধ না থামতেই এখন ইসরায়েল প্যালেস্টাইনিদের ওপর অত্যাচার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তাদের অনেক জায়গা তো দখল করেই ফেলেছে। এখন পুরো গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, এগুলো বন্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধ আর অস্ত্রের খেলা বন্ধ করতে না পারলে আসলে সাধারণ মানুষই কষ্ট ভোগ করে।’
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই আমাদের মূল শক্তি। তারা আমাদের সাহসের উৎস। আর এই জনগণের একটা বড় অংশ শ্রমিক।
‘বাংলাদেশের শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় গুণ হল- যদি সময় বেশি নেয়ার প্রয়োজন হয় অনুরোধ করলে তারা তা শোনে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টার কাজ হলে ওই ৮ ঘণ্টাই করবে।
‘তাই ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান থাকবে- যারা শ্রম দেয় সেই শ্রমিকদের দিকেও আপনারা দৃষ্টি দেবেন। তাদের ভাল-মন্দ দেখবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমার রাজনীতি এদেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতী মানুষের জন্য। কাজেই ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা যত বেশি প্রসারিত হবে দেশের সাধারণ মানুষ ততই লাভবান হবে।’
আরও যাতে বিনিয়োগ আসে সেই ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার, আমরা তো ব্যবসা বুঝি না। তবে আমরা ব্যবসাবান্ধব সরকার- এটুকু দাবি করতে পারি। কাজেই ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন। আপনাদের কাজে সব ধরনের সুবিধা আমাদের সরকার করে যাবে সেটুকু কথা দিচ্ছি।
আরও পড়ুন : ইসরায়েলকে শর্ত ছাড়া অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি যুক্তরাষ্ট্রের
‘আগেই বলেছি- আমরা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে উজ অফ ডু বিজনেস, সেটা আমরা ইতোমধ্যে বিডা-তে করে দিয়েছি। সে সঙ্গে খরচের দিকটাও আমাদের নজরে থাকবে। যাতে আপনাদের কষ্ট অফ ডুয়িং বিজনেস বৃদ্ধি না পায়। সেদিকে আমরা নজর দেব।
‘তবে আপনাদের ট্যাক্স ও বিদ্যুৎ-গ্যাস বিল যথাযথভাবে যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে। কারণ সরকার উপার্জন করতে না পারলে সুবিধাটা দেবে কী দিয়ে?’
রপ্তানি বিকাশে প্রয়োজনে নীতিমালার বৈষম্য দূর করে রপ্তানি শিল্পকে আরও বেশি সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের প্রাইম মিনিস্টার অফিসে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে দিয়ে একটা কমিটি করে দিয়েছি। কিছু সাব-কমিটি করে দিয়েছি।
‘কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কী কী সুবিধা পাব এবং সে সুবিধাগুলো আমরা কিভাবে নিতে পারি আর কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের কিছু অসুবিধা হতে পারে- সে ক্ষেত্রে কিছু সময় বাড়ানো এবং কী কী সুযোগ কার্যকর করতে পারি, সে বিষয়গুলো নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি।’
আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়েই আমাদের পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করে দেশকে আরও উন্নতি করতে পারব। তার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
আরও পড়ুন : মর্গে পরিণত হতে পারে গাজার সব হাসপাতাল, আশঙ্কা রেডক্রসের
রপ্তানিকারকদের সমিতি লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, হংকং, ভারত, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, কম্বোডিয়াসহ ১৫টি দেশের ক্রেতা, ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যান্ড এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন।