২০২১ সালের এপ্রিল মাসে জিএসএমএ (গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখা গেছে, বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর ৪১ শতাংশ। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহার কমতে শুরু করেছে। বেড়ে যাচ্ছে ফিচারফোনের (বাটনওয়ালা বা বার ফোন) বাজার।
চিত্রটা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে বিটিআরসির প্রতিবেদনের দিকে তাকানো যাক। বিটিআরসি বলছে, গত আগস্ট মাসে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল হ্যান্ডসেটের সংখ্যা— ফিচার ফোন ৭২ দশমিক ৭০ এবং স্মার্টফোন ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। যা গত জানুয়ারিতে ছিল— ফিচার ফোন ৬৬ দশমিক ৪৫ এবং স্মার্টফোন ৩৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনের অপর অংশে দেখা গেছে, দেশে ফিচার ও স্মার্টফোনের আমদানিও কমেছে। গত আগস্ট মাসে দেশে ফিচার ফোন আমদানি হয়েছে ৯৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। স্মার্ট ফোন আমদানি করা হয়েছে ০ দশমিক ৫২ শতাংশ (সব মিলিয়ে ৩৪ হাজার ১৭৯টি সেট), যা চলতি বছরের জানুয়ারিতে ছিল— ফিচার ফোন ৮৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, আর স্মার্টফোন ছিল ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। সব মিলিয়ে সেটের সংখ্যা ৬১ হাজার ৮৯১টি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশে ফিচার ও স্মার্টফোন মিলিয়ে উৎপাদন হয়েছে ৪১ লাখ ৪৫ হাজার পিস। এরমধ্যে টুজি ফোন ২৭ লাখ ৫৪ হাজার, অপরদিকে ফোরজি ছিল ১৩ লাখ লাখ ৬৮ হাজার এবং ফাইভজি ২৩ হাজার। এই বছরের আগস্ট মাসে মোট উৎপাদিত ফোনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ৭০ হাজার। এরমধ্যে টুজি ফোন ২১ লাখ ৪৩ হাজার, ফোরজি ৮ লাখ ২৩ হাজার এবং ফাইভজি ৩ হাজার ফোন। এই হিসাবে দেখা যায়, গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় আগস্টে এসে মোবাইল ফোনের উৎপাদন কমেছে।
ফিচার ফোনের বাজার বড় হওয়া, স্মার্টফোনের উৎপাদন ও আমদানি কমে যাওয়া এবং গ্রে মার্কেটের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মানুষের বিহেভিয়ারের পরিবর্তন অন্যতম একটা কারণ হতে পারে।’
তিনি জানান, বাজারে এখন এক হাজার টাকায় ফিচার ফোন কিনতে পাওয়া যায়। এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা লাগে স্মার্ট ফোন কিনতে। অর্থনৈতিক বিষয়টাও একটা কারণ। হয়তো এই সময়ে মানুষ এসবের পেছনে বেশি টাকা খরচ করতে চায় না। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির প্রতিবেদনের চিত্রই প্রকৃত চিত্র নয়। দেশের সাড়ে ৫ কোটি মানুষ এখন ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুক তো ফিচার ফোনে ব্যবহার করা যায় না।’ ফলে প্রতিবেদনের চিত্র প্রকৃত চিত্র নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আবারও বলেন, ‘আগামীতে টুজি ও ফোরজিই থাকবে।’
বাজারে গ্রে মার্কেট (অবৈধ পথে আসা মোবাইল ফোনের বাজার) বড় হওয়ার বিষয়টি জানালে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো এটার দায়-দায়িত্ব নিতে পারি না। স্মাগলিং ঠেকানো তো আমাদের কাজ না। এটার দায়িত্ব এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)। এনবিআর এসব ধরবে। তারা ধরতে না পারলে তো আমাদের কিছু করার নেই। আমরা মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করি। লোকবল কম থাকার কারণে সেটাও পর্যাপ্ত নয়।’ তিনি মনে করেন, এই বাজার (গ্রে মার্কেট) বড় হওয়ার পেছনে স্মাগলিংও একটা কারণ। যারা এই পথে ফোন আনে তারা আইফোন, ফোল্ডেবল ফোন নিয়ে আসে। ফলে আমদানি কম হওয়া, দেশীয় উৎপাদকদের উৎপাদন কমে গেলেও এই পথে আসা ফোনের কারণে বাজার ঠিকই থাকছে। প্রসঙ্গত, দেশে গত জানুয়ারি থেকে থ্রিজি মোবাইল ফোনের উৎপাদন ও আমদানি বন্ধ রয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইমপেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) সিস্টেম চালুর পরে গ্রে মার্কেটের আকার কমে ৫ শতাংশর নিচে নেমে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এই নিয়ম শিথিল করা হলে এই মার্কেট আবারও বড় হতে থাকে। বর্তমানে গ্রে মার্কেট ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মোবাইলফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহিদ বলেছেন, স্থানীয় উৎপাদকেরা মোবাইল ফোনের উৎপাদন কমিয়েছে। এই হার বর্তমানে ২০-৩০ শতাংশ। বাজারে চাহিদাও কমেছে বলে তিনি জানান। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে স্থানীয়ভাবে মোবাইলের উৎপাদন আরও কমবে। জাকারিয়া শহিদ আরও জানান, তার নিজের প্রতিষ্ঠানেও (সিম্ফনি মোবাইল) উৎপাদন কমিয়েছেন।
দেশে টেকনো, আইটেল ও ইনফিনিক্স মোবাইলফোনের উৎপাদক ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী রেজওয়ানুল হক জানান, এখন শুধু টুজি আর ফোরজি ফোন সেট তৈরি করা হচ্ছে। আগামীতে এই দুটো ফোনসেটই থাকবে। নতুন যুক্ত হবে ফাইভজি ফোন। তিনিও জানান, বাজারে টুজি সেটের চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনও বাড়াতে হয়েছে।