মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের প্রমাণ দিয়েছেন অভিযোগকারীরা।
রোববার (২৮ আগস্ট) কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল হুদার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি অভিযোগের তদন্ত করতে এলে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে এসব প্রমাণ প্রদান করেন তারা।
তদন্ত কমিটির প্রধান নুরুল হুদার উপস্থিতিতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, এলজিইডি ঠিকাদারসহ অর্ধশতাধিক অভিযোগকারী উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়মের তথ্য তুলে ধরেন। সেই সাথে অভিযুক্ত উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধাকে প্রত্যাহার ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
কমিটির প্রধান নুরুল হুদা ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নির্মল কুমার বিশ্বাস ও মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন সরকার।
অভিযোগকারীরা জানান, বরাদ্দকৃত কাজের বিল পাস করাতে হলে আমিনুল ইসলাম মৃধাকে ১০ থেকে ২০ ভাগ কমিশন দিতে হয়। নতুবা তিনি কোনো বিলের ছাড়পত্রে স্বাক্ষর করেন না। টাকা ছাড়া একাধিকবার তার কাছে গেলেও কোনো কাজ হয় না। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজের ২ লাখ টাকা বরাদ্দেও তাকে ৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে প্রধান শিক্ষিকাগণকে। টাকা না দিলে কাজের প্রত্যয়ন দিতে চান না আমিনুল ইসলাম মৃধা। শিকক্ষদের সাথে খারাপ আচরণেরও অভিযোগ করেন তারা।
তদন্ত কমিটির প্রধান নুরুল হুদাকে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, দেড় মাস আগে কুলাউড়ার ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রস্তাব করেন। বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তিনি সম্প্রতি কৌশলে নানা প্রতারণার আশ্রয় নেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের নামে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিতে বলেন। প্রকল্প তৈরি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিলে অভিযুক্ত প্রকৌশলী (আমিনুল) জানান এটি সরাসরি তার কাছে জমা দিতে হবে। তখন তাঁদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিষয়টি খুলে বলেন। কয়েকটি ইউনিয়নের স্থানীয়দের কাছে এরকম বিশাল প্রকল্পের বরাদ্দ হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে এটি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন কয়েকজন চেয়ারম্যান। মূলত নিজের অপকর্ম আড়াল করতে তিনি প্রকল্পের নামে চেয়ারম্যানদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।
কর্মধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ বলেন, তিন সপ্তাহ আগে প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধা আমাকে জানান ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ পাওয়া যাবে। এজন্য স্কিম আকারে প্রকল্প তৈরি করে দিতে হবে। আমি তার কথায় প্রকল্প তৈরি করে দিয়েছিলাম। বিষয়টি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দারা জেনে আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। পরে জানতে পারি এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে এরকম বিশাল বাজেটের কোনো বরাদ্দ নেই। তার এরকম প্রতারণায় আমার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে লজ্জায় পড়েছি।
বিষয়টি জানতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কুলাউড়া উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
তিন সদস্যের কমিটির প্রধান নুরুল হুদা তদন্ত শেষে সাংবাদিকদের জানান, সবার সামনে তদন্ত অনুষ্ঠিত হলো। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন যথাসময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেবো। যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই এর বেশি আর কিছু বলতে চাই না।
উল্লেখ্য, কুলাউড়া উপজেলার প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম মৃধার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসিন সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল হুদার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেন এবং বিষয়টি তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন।