নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচনে গোপন বুথে না দিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা। একই সঙ্গে ‘নিজেদের প্রার্থীর প্রতীক মানেই নৌকা প্রতীক’ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি প্রকাশিত এক ভিডিওতে ওই যুবলীগ নেতাকে এভাবেই কথা বলতে দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নে আয়োজিত উঠান বৈঠকে এই মন্তব্য করেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সিকদার। তিনি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনের পক্ষে নির্বাচন করছেন। সাইফুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। সাইফুল ইসলামকে বিজয়ী করতে নির্বাচনী প্রচারণাকালে একাধিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে প্রার্থী এবং তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
প্রকাশিত ভিডিওতে লিটন সিকদারকে বলতে শোনা যায়, ‘ঘোড়ার পক্ষে ভোটের জন্য নজরুল ইসলাম (এমপি) ভাই আমাদের বিদেশ থেকে নিয়ে আসছেন। আমাদের মেম্বারকে দায়িত্ব দিসেন— এটা ঘোড়া না, এটাই নৌকা। ঘোড়া মানেই নৌকা, নৌকা মানেই ঘোড়া। ঘোড়া মানেই নজরুল ইসলাম বাবু। আমরা সবাই ঘোড়া মার্কায় ভোট দিব। যেহেতু সবাই ঘোড়া, তাইলে তো আমাদের বুথের ভেতরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নাই। যারা বুথের ভেতরে যাবেন, তাঁদের অনেকেই বৃদ্ধ, চোখে দেখেন না। অন্ধকারে ভুলে অন্য মার্কায় ভোট যাইতেও পারে। সুতরাং আমরা সবাই টেবিলের সামনেই ভোটটা দেব।’
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যায় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ লিটনের বাড়িতে সাইফুল ইসলাম স্বপনের পক্ষে উঠান বৈঠক হয়। সেখানে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বলেন যুবলীগ নেতা লিটন সিকদার।
ভিডিওর বিষয়ে সাইফুল ইসলামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহজালাল মিয়া বলেন, ‘কালাপাহাড়িয়া এলাকাটা স্বপনের নিজের এলাকা। এইখানে আমার কর্মীদের প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। কেউ আমার দোয়াত–কলমের এজেন্ট হলে তাকে হেনস্তা করা হবে। ইউনিয়নে জাল ভোট ও কেন্দ্রে নাশকতার আশঙ্কা আছে জানিয়ে আমি অতিরিক্ত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছি। প্রশাসন সোচ্চার হলে এই ধরনের ঘটনা ঠেকানো সম্ভব হবে। না হলে এরা ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করবে।’
উঠান বৈঠক এমন বক্তব্য দেওয়ার বিষয়ে জানতে যুবলীগ নেতা লিটন সিকদারের ব্যবহৃত ফোন নম্বরে করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনজন। তাঁরা হলেন, শাহজালাল মিয়া (দোয়াত কলম), সাইফুল ইসলাম স্বপন (ঘোড়া) এবং কাজী সুজন ইকবাল (আনারস)। উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রার্থীরা।
যুবলীগ নেতার বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু রাখতে পর্যাপ্ত পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন থাকবে। কোথাও অনিয়ম করার সুযোগ দেওয়া হবে না।’