মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার জুড়ী নদীতে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় উপজেলার জুড়ী নদীর কন্টিনালা অংশে জায়ফরনগর ইউনিয়নের আয়োজনে এ পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
পলো বাওয়া উৎসবের উদ্বোধন করেন সদর জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা। এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল কাশেম, আব্দুল জব্বার, কামরুল হাসান প্রমুখ।
উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে অংশ নিয়ে পলো বাওয়া উৎসবকে মাতিয়ে তোলেন কয়েকশ মানুষ। পেশাদার, সৌখিন ও প্রবাসী মাছ শিকারিরা পলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীতে। কন্টিনালা সেতু থেকে শুরু করে রাবার ড্যাম পর্যন্ত পলো দিয়ে মাছ ধরার মনোরম সে দৃশ্য উপভোগ করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। উপস্থিত সকলের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা, উৎসব ও আমেজের কোনো কমতি ছিল না।
জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা বলেন, পলো দিয়ে মাছ ধরা- এ যেন গ্রাম-বাংলার এক চিরপরিচিত উৎসব। কিন্তু এখন আর এ উৎসবের আমেজ চোখে পড়ে না। কিভাবে পড়বে? এখন তো আগের মতো সেই খাল-বিল বা ডোবা-নালা নেই, যেখানে ভরা বর্ষা মৌসুমে হরেক রকমের মাছ এসে জমায়েত হবে। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে মৎস্য শিকারিরা মাছ ধরার উদ্দেশে পলো আর মাছ রাখার ঝুড়ি কাঁধে নিয়ে সকালে বের হয়ে যেত আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসতো নানা ধরনের মাছ নিয়ে। গ্রামে বিভিন্নভাবে মাছ ধরার ব্যাপারটা ছিল অনাবিল এক আনন্দের উৎসব। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য পলো বাওয়া ধরে রাখার জন্য বিগত ৪ বছর যাবত জায়ফরনগর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পলো বাইচের আয়োজন করা হচ্ছে।
বেলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর শীত মৌসুমে জুড়ী নদীতে পানি কমতে শুরু করলে আশপাশের গ্রামবাসী পলো দিয়ে মাছ শিকারের দিন নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত দিনে শত শত লোক পলো, জাল, দড়িসহ মাছ শিকারের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে নদীতে হাজির হন। মাছ শিকার উৎসব উপলক্ষে নদীর দুই পাড়ে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।
বেলাগাঁও গ্রামের প্রবাসী ব্যবসায়ী হেলাল খান জানান, দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। বাড়িতে এসে শখের বসে পলো বাইচে এলাম। পলো দিয়ে মাছ শিকারের আনন্দই আলাদা।
শনিবার শিকারিদের অনেকেই বোয়াল, আইড়, শোল, গজারসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ধরেন। একজনের পলোতে মাছ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার আনন্দে শরিক হন পাশের লোকজনও। উৎসবে পলো ছাড়াও ফার জাল, ছিটকি জাল, ঝাকি জাল, পেলুন ইত্যাদি দিয়েও মাছ শিকার করেন অনেকে।