দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত সবসময়ই আকর্ষণীয় স্থান। আর এখানেই নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠেছে বাইল্যাখালী কাঁকড়া বিচ। ইতোমধ্যে বিচটি পর্যটকদের নজর কেড়েছে। এখানকার লাল কাঁকড়াগুলো সৈকতে ভাটার পর চিকচিক করা বালিয়াড়িতে নিজের তৈরি করা বাসা থেকে বেরিয়ে ছোটাছুটি এবং পা দিয়ে নানান আকৃতির আল্পনা তৈরি করে। যা পর্যটকদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করছে। এ কারণে ওই এলাকাকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষণা করে কাঁকড়া বিচ নাম দিয়েছে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে দৃষ্টিনন্দন এই বিচ। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাইল্যাখালী এলাকায় অবস্থিত। সৈকতের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ওই এলাকায় লাল কাঁকড়া বেশি বিচরণ দেখে তা সংরক্ষণে এগিয়ে আসে উপজেলা প্রশাসন। বাঁশ ও কাঠের অস্থায়ী সীমানা প্রাচীর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে এই সমুদ্রসৈকতটিকে। এতে সেখানে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লাল কাঁকড়ার সংখ্যা। প্রতিদিন জোয়ারের পর ভাটায় পানি নেমে গেলে পুরো সৈকত লাল বর্ণ ধারণ করে। এতে মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকেই লাল কাঁকড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, উখিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উক্ত এলাকাকে সংরক্ষিত বিচ ঘোষণার পর থেকে লাল কাঁকড়ার বিচরণ বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন চরের বুকে সকাল-বিকাল দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল কাঁকড়ারা। মানুষের স্পর্শ পেলে গর্তে ঢুকছে। আবার গর্ত থেকে বেরিয়ে চলাচল করছে। টকটকে লাল কাঁকড়াগুলো দেখে ভ্রমণে আলাদা তৃপ্তি পাচ্ছেন পর্যটকরা। এ যেন অন্যরকম এক অনুভূতি। এতে পর্যটকদের জন্য যেমন তৈরি হলো উপভোগের নতুন জায়গা, পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেও যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।
উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাসিন্দা ও উখিয়া উপজেলা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়ছার বলেন, ‘উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাইল্যাখালী এলাকায় লাল কাঁকড়া সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। এটি পর্যটন শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ হওয়ার পাশাপাশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ জন্য বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনকে এগিয়ে আসা দরকার। সম্পূর্ণ ইকো সিস্টেমে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সীমানা প্রাচীরের মাধ্যমে মানুষের চলাচল সীমিত করে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি আরও আকর্ষণীয় হবে।’
স্থানীয় আবু সৈয়দ বলেন, ‘বাইল্যাখালী এই সৈকতে প্রতিনিয়ত মোটর বাইক ও বিভিন্ন যানবাহনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে লাল কাঁকড়া। প্রতিদিন গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা পড়ছে অসংখ্য লাল কাঁকড়া। এ কারণে প্রশাসন সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় পর্যটকদের জন্য একটি নতুন জায়গা তৈরি হলো।’
কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি আ ন ম হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সৈকতের পরিবেশ-প্রতিবেশ ঠিক রেখে লাল কাঁকড়া সংরক্ষণের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। বাইল্যাখালী কাঁকড়া বিচ নিঃসন্দেহে পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দেবে। প্রধানমন্ত্রীও লাল কাঁকড়া সংরক্ষণের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়াও ওই এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইকো ট্যুরিজম সিস্টেমে সম্পূর্ণ পরিবেশ সম্মতভাবে করা হয়েছে। যাতে পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয়নি বরং পর্যটক আকর্ষণে একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে।’
কক্সবাজার সৈকতে লাল কাঁকড়ার এই সৌন্দর্য অন্য কোথাও নেই উল্লেখ করে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিব বলেন, ‘লাল কাঁকড়া বিচটি পর্যটকদের জন্য খুবই স্পেশাল। প্রতিদিন বাইক থেকে শুরু করে নানা কারণে হুমকির মুখে থাকা লাল কাঁকড়াকে সংরক্ষণ করা জরুরি। এ কারণে বাঁশের বেড়া দিয়ে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে বাণিজ্যিক কোনও উদ্দেশ্য নেই। সম্পূর্ণ ইকো সিস্টেমে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সীমানা প্রাচীর দিয়ে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। তাতে কিছু অসাধু ব্যক্তি এই উদ্যোগটাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ তুলেছে। গুগলের মাধ্যমে জেনে লাল কাঁকড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি।’
শুধু বাইল্যাখালী সৈকত নয়, কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।