অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। বাংলাদেশের কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে চলেছে আজ ২৫ জুন। এক সময়ের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চোখ জুড়াচ্ছে কোটি বাঙালির। বহুল প্রতীক্ষিত লাল-সবুজের গর্বের এই পদ্মা সেতুর গৌরবগাঁথা এবার পৌঁছে গেলো ইউরোপের পর্যটন ও ফুটবলের দেশ খ্যাত স্পেনে।
দেশে-বিদেশে আলোচিত পদ্মা সেতুর স্বপ্ন পুরনের আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ছে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে সুদুর স্পেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝেও।
পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় দেশের মানুষের ন্যায় উচ্ছ্বাসিত স্পেনে বসবাসরত প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশিও।
বিশ্ব দরবারে পদ্মা সেতুর পটভূমি ও আগমনী বার্তা তুলে ধরতে এবং সেতুর উদ্বোধনকে আরও স্বরণীয় করে রাখতেই স্পেনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসীদের নিয়ে ভিন্নধর্মী বিশেষ আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনকে বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন অভিহিত করে দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল জানান, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ ২৫ স্থানীয় সময় দুপুর ১২ টায় দূতাবাস হলে এক আনন্দ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য এ জন্য কমিউনিটি নেতৃবৃন্দসহ সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার আহবান জানান তিনি।
আজ ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২৬ জুন সকালে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে সেতুটি। সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর এপারেও তাই সেই আনন্দের ছটা। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ কিংবা ঘরোয়া আড্ডায় প্রবাসীদের এখন একটাই আলোচনার বিষয়। কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় বর্তমান সরকারের ভূঁয়সী প্রশংসার পাশাপাশি সেদিনের বিরোধিতাকারীদেরও সমালোচনায় মুখর প্রবাসীরা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে স্বাগত জানিয়ে, দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সরওয়ার মাহমুদ বলেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক।‘দেশ স্বাধীন করার সময় যেভাবে গোটা জাতি এক হয়েছিল, সেভাবে পদ্মা সেতুর জন্যও দেশে -বিদেশে সবাই এক হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় যেভাবে দেশের মানুষ তার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই এখন দেশের মানুষ পদ্মা সেতুর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।”স্বাধীনতার পর একমাত্র পদ্মা সেতুর জন্যই আবারও গোটা জাতি এক হয়েছে”।
বাংলাদেশ দূতাবাস স্পেনের বাণিজ্যিক সচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, পদ্মার বুকে মাথা উচূ করে দাঁড়ানো সেতুটি আজ থেকে হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের আশা আকঙ্খার প্রতীক। পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগের জন্য আস্থা তৈরি করেছে।পদ্মা সেতু ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্য, সম্ভাবনা, তৈরি করার পাশাপাশি বিদেশী, বিনিয়োগ ও বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধিতে, সহায়তা, করবে।
স্পেন আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতা জাকির হোসেন বলেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শেখ হাসিনা নিজেদের টাকা দিয়ে নিজেই পদ্মা সেতু করলেন।’ আজ সেই নদীর বুক চিরে পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে যেন বঙ্গবন্ধুকেই কুর্নিশ করছে। এই সেতুর ফলে এখানকার জনপদে উন্নয়নের আলো ছড়িয়ে পড়েছে।’
আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে আনন্দ উৎসব করা হবে জানিয়ে স্পেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল কামালী বলেন, যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল, তাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।