চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতানোর কথা বলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী।
ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফের গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ ঘোষণা দেন।
গত দুই সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। কয়েক মাস আগেও ফের নিজের নির্বাচনী আসনে মনোনয়ন নিশ্চিতের জন্য আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জোটের মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় প্রতীক ফুলের মালা নিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা দেন তিনি।
নজিবুল বশরসহ সারা দেশে বিভিন্ন আসনে দলটির ৪২ জন প্রার্থী ফুলের মালা প্রতীকে নির্বাচন করছেন এবার।
লিখিত বক্তব্যে মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৪ দলীয় জোট নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মান জানিয়ে ও ফটিকছড়ির সার্বিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার নিমিত্তে আমি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপি আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।’
সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে জোটনেত্রীর প্রতি সম্মান ও নৌকার সমীকরণ সহজ করার কথা জানান তিনি।
বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক বলেন, ‘এই ফটিকছড়িতে আমি চারবারের মধ্যে তিনবারই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি এবং এই নৌকার মাধ্যমে আমি বারবার সম্মানিত হয়েছি। যেহেতু ১৪ দলীয় জোট নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই ফটিকছড়িতে নৌকা প্রতীকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন, সেহেতু উনার প্রতি সম্মান জানানো আমার নৈতিক দায়িত্বও বটে।
‘এমতাবস্থায় ফটিকছড়িতে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা আমি সমীচীন মনে করছি না। তা ছাড়াও আমি যদি নির্বাচনি মাঠে থাকি তাহলে ভোটের যে সমীকরণ হবে, সেখানে আমার প্রাপ্ত ভোটের জন্য নৌকার বিজয় নিশ্চিতকরণে বাধার কারণ হতে পারে বলে আমি মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাতেই সারা দেশে তরিকত ফেডারেশনের ৪২ জন প্রার্থী নির্বাচন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১৪ দলীয় জোট সমর্থিত সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় মূল্যবোধ, আধ্যাত্মিকতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের পক্ষ হতে আমি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এমপিসহ সর্বমোট ৪২ জন প্রার্থী আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। সংবিধান রক্ষার এই নির্বাচনে আমিসহ বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের অন্যান্য প্রার্থীগণ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ, পথসভা চালিয়ে যাচ্ছি। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি আমেজে আমরা আমাদের কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চালিয়ে আসছি।’
দলটির নানা পদক্ষেপে সরকার নানাভাবে উপকৃত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আস্থা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ইতোমধ্যে জান বাজি রেখে অনেক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জাতীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনের ৪০ বছরের ধারাবাহিকতার আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অনেক উপকৃত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই আমরা পুরস্কৃত হয়েছি।’
ওই সময় তার সঙ্গে দলীয় নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন৷
চট্টগ্রাম-২ আসনে এবার নির্বাচনে লড়ছেন ৯ জন। তার মধ্যে ভোটের মাঠে সবচেয়ে সরব আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব এবং সদ্য আত্মপ্রকাশ করা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভাণ্ডারী।
বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীকে হ্যাভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হলেও নির্বাচনে প্রচারে তাকে তুলনামূলক কমই দেখা গেছে।