সিলেটের কানাইঘাটের নাজিম হত্যা মামলায় পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় সঠিক তদন্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্বজনরা। আসামিদের সাথে কানাইঘাট থানার ওসির সখ্যতার কারণে মূল পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী তদন্তকালেই মামলা থেকে রেহাই পেয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। এমন অবস্থায় মামলাটি কানাইঘাট থানা থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা অন্য কোনো সংস্থায় স্থানান্তরের দাবি তাদের।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান নিহত নাজিমের স্বজনরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কানাইঘাট উপজেলার বড়পাতন গ্রামের বাসিন্দা নিহত নাজিমের চাচা তাহির আলী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৯ আগস্ট সকালে বড়চাতল গ্রামে ট্রাক্টর দিয়ে হাল চাষ করে না দেওয়ায় ট্রাক্টর চালক নাজিম উদ্দিনের ওপর ক্ষুব্ধ হন একই গ্রামের আব্দুস শুকুর। এ সময় নাজিম অন্য কারও জমিতে হাল চাষ করতে পারবেন না বলে হুমকি দিয়ে যান শুকুর। পরদিন একই বিষয়ে নাজিমের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন শুকুর। এ সময় দু’জনের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। এমন সময় আব্দুস শুকুরের স্বজন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি আফতাব উদ্দিন সেখানে যান। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুস শুকুরকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান এবং নাজিম আহমদ নিজের বাড়িতে চলে যান। এদিন দুপুরে শুকুরের পক্ষের রুবেল আমাদের এক স্বজনকে জানায়, নাজিমকে বাইরে পাঠিয়ে দে, তার পা কাটবো। এ খবর শুনে নাজিমকে বাঁচাতে অন্য গ্রাম থেকে বাড়িতে আসার পথে আফতাব ও আব্দুস শুকুরের নেতৃত্বে নাজিমের বাবার ওপর হামলা করা হয়। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে নাজিম বেরিয়ে এলে তাকে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিন রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাজিমের চাচা তাহির আলী বলেন, হত্যার ঘটনায় ১ সেপ্টেম্বর নাজিমের বাবা বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় আব্দুস শুকুর, দেলোয়ার হোসেন, আফতাব উদ্দিন, রুবেল আহমদ, আব্দুল গফুর, হেলাল আহমদ, দিলাল আহমদ ও বিলাল আহমদকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে আফতাব উদ্দিন ও আব্দুস শুকুরকে গ্রেপ্তার করে। খুনের ঘটনায় পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আব্দুস শুকুর দায় স্বীকার করেন। পরে আদালতেও তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে আফতাব উদ্দিন কোনো স্বীকারোক্তি দেননি। তিনি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর জকিগঞ্জের কালিগঞ্জের খাসেরা এলাকা থেকে মামলার চার নম্বর আসামি রুবেলকে আটক করেন স্থানীয়রা। এ সময় কানাইঘাট থানার পুলিশকে ফোনে জানালেও তারা আসামি নিতে আসেনি। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পরদিন গিয়ে পুলিশ রুবেলকে আটক করে নিয়ে আসে।
তাহির আলী আরও বলেন, মামলার ৮ আসামির মধ্যে ৪ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। অন্য আসামিরা এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। ঘটনার মূল হোতা এলাকার প্রভাবশালী আফতাব উদ্দিন। মূলত তার বাড়ি থেকে পরিকল্পনা ও হামলা চালিয়ে নাজিমকে হত্যা করা হয়েছে। আফতাব এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী। তিনি সীমান্ত এলাকায় গরু ও মাদক চোরাচালানের অন্যতম সর্দার। তার বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তারা এলাকায় ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে চলেছে। বলছে- একটি মার্ডার করেছি, আরও করবো। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছি না। কারাগারে থাকা আফতাব জামিন পেলে আবারও হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, চোরাকারবারি আফতাব ও তার চক্রের সঙ্গে কানাইঘাট থানার ওসি তাজুল ইসলামের সখ্যতা রয়েছে। চোরাচালানির টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা পান ওসিও। কানাইঘাটে যোগদানের পর থেকেই আফতাবের সঙ্গে ওসির ভালো সম্পর্ক। ফলে কানাইঘাট থানার পুলিশ মামলার তদন্ত করলে পলাতক আসামিরা গ্রেপ্তার হবে না। এমনকি মামলার সুষ্ঠু তদন্তও হবে না। ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী আফতাব উদ্দিন তদন্তকালেই মামলা থেকে রেহাই পেতে পারেন। সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি পিবিআই কিংবা অন্য কোনো সংস্থার কাছে তদন্তের জন্য স্থানান্তর করার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত নাজিমের বাবা লুৎফুর রহমান, চাচা কবির আহমদ ও চাচাতো ভাই ফজলুর রহমান।