নজরুল ইসলাম বাবুল’র ২১ দফার ইশতেহার ঘোষণা

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল  তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।

রবিবার (১৮ জুন) বিকেল ৩টায় নগরীর কুমারপাড়াস্থ প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ২১ দফা সম্বলিত এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।

এসময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সাইফুদ্দিন খালেদ, সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুস শহিদ লস্কর বশির সহ জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নজরুল ইসলাম বাবুল তার ইশতেহারে এই ইশতেহারে নগরীর নানা সমস্যা তুলে ধরে তা থেকে পরিত্রাণে তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। তাঁর ঘোষিত ইশতেহারের ২১ দফা হলো :-

১. সিলেটকে একটি নাগরিকবান্ধব, শিল্পবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগর হিসেবে গড়ে তোলা।

২. সিলেট সিটি করপোরেশনকে সার্বজনীন এবং দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা এবং নগরের উন্নয়নে করপোরেশনের সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। নগর ভবনকে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে একটি দৃষ্টিনন্দন নগর ভবনে রূপান্তর করা।

৩. ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ওয়ার্ডের বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা, যারা এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে এই কাজ করবে।

৪. নগরের সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এছাড়া ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভবন নির্মাণের শর্তগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা নিশ্চিত করা।

৫. নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়ন বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি নগরীর বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদ্যমান রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা।

৬. ওয়াসার আশায় বসে না থেকে নগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা পানীয় জলের সংকট দুরীকরণে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ।

৭. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বর্জ্য রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা, অপচনশীল পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের জন্য আলাদা প্ল্যান্ট স্থাপন করে এগুলোকে রিসাইক্লিং করে গৃহস্থালী পণ্য তৈরির ব্যবস্থা করা।

৮. নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারসহ নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করা, খাল ও ছড়া পুনঃখনন, সুরমা নদী খননের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করে সরকার যাতে সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নেয় তার পদক্ষেপ নেওয়া, শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা।

৯. নাগরিক সেবার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য আলাদা সেল প্রতিষ্ঠা করা।

১০. শিশু পার্ক নির্মাণ, দিঘী সংস্কার ও অবৈধ দখলে থাকা পুকুর-দিঘী উদ্ধার।

১১. সিটি করপোরেশনের কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন করা।

১২. সিটি করপোরেশনে উদ্যোগে কারিগরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা, গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা। কিশোর গ্যাং ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন এবং কারিগরী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেওয়া।

১৩. সিলেট সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে একটি আধুনিক পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা, একইসাথে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া।

১৪. সিলেট নগরে কর্মজীবী নারীদের সন্তানের দেখভালের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা, ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার স্থাপন এবং কর্মজীবী নারীদের স্বল্প খরচে থাকার সুবিধার্থে হোস্টেলের ব্যবস্থা করা।

১৫. সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা তুলে ধরার জন্য জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া।

১৬. সিলেটের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা, একটি সুপরিকল্পিত সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলা এবং পর্যটনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১৭. খেলার মাঠ তৈরি এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে খেলাধুলার প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নগরকে সবুজে আচ্ছাদিত করা।

১৮. শ্রমিকদের সুচিকিৎসার জন্য সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা।

১৯. আধুনিক আবাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

২০. সিলেট নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, তরুণদের জন্য আইটি ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণ করার মাধ্যমে ডিজিটাল নগরীর হিসেবে গড়ে তোলা

২১. সিলেট সিটি করপোরেশনকে সত্যিকার অর্থে একটি সেবামূলক ও জনকল্যাণমুখী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি হাতে নেবো এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নগর উন্নয়নে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমাকে আপনাদের যদি যোগ্য মনে হয়, যদি মনে করেন আমার কথাগুলো সত্য এবং উন্নয়ন ভাবনা সঠিক, তাহলে আগামী ২১ জুন আমাকে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুন। আপনাদের আমানতের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে পারব এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে।