ভারতের রাজধানী দিল্লিতে এমনিতেই দূষণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। শীতের শুরুতে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ে কয়েকগুণ । গাড়ির নিগর্মন তো রয়েছেই, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো বন্ধ থাকেনি, পাশাপাশি এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দিল্লির আশেপাশের রাজ্য, যেমন পাঞ্জাব বা হরিয়ানায় চাষের ক্ষেতে ফসলের গোড়া পুড়িয়ে দেয়ার ফলে সৃষ্ট বায়ু দূষণ।
দীপাবলির পরেই দিল্লির বাতাসের গুণমান বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ‘গুরুতর’ছিলো। বুধবার সন্ধ্যায় বাতাসে দূষণের পরিমাণ ছিল ৩৭৬ একিউআই। বৃহস্পতিবার সকালে তা পৌঁছে গেছে ৪০৮ একিউআইয়ে। চিকিৎসক এবং পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, বাতাসের দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে সকালের দিকে। সে সময় বাড়ি থেকে বার না হওয়াই শ্রেয়। বস্তুত, শিশুদের সকালে স্কুলে যেতে হয় বলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন দিল্লির একাধিক চিকিৎসক।
এ কারণেই জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কাছে স্কুল বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, বায়ু দূষণের মাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখা হোক।
চিকিৎসক বিষ্ণু দে জানিয়েছেন, দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা এখন যেখানে গিয়ে পৌঁছেছে, তাতে সুস্থ মানুষেরও অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ গলা এবং ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক এবং শিশুরা। বিষ্ণু জানিয়েছেন, সাধারণ ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। কারণ, শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত বায়ু শরীরে ঢুকছে।
পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন, ‘ভোরের দিকে বাতাসে দূষণের স্তর অনেক নীচের দিকে থাকে। যে কারণে শহরজুড়ে স্মগ বা ধোঁয়াশা তৈরি হয়। সে সময় বাইরে বার হওয়া সবচেয়ে খারাপ।
শিশু অধিকার কমিশনের বক্তব্যও তাই। তারা বলেছেন, শিশুদের ওই সময়েই স্কুলে যেতে হয়। ফলে বহু শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তবে অভিভাবকেরা শিশু অধিকার কমিশনের সঙ্গে সহমত নন। তাদের বক্তব্য, করোনার জন্য দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। ছাত্রছাত্রীদের তার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এবার দূষণের কারণে স্কুল বন্ধ হলে তারা আরো পিছিয়ে পড়বে। সরকারের দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধানসূত্র খুঁজে বার করতে হবে। স্কুল বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়।
এর আগেও দূষণের জন্য দিল্লিতে স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। সরকার এবারেও জানিয়েছে, অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বার না হওয়াই ভালো। সম্ভব হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু অফিসগুলি সে পরামর্শ মানছে না বলেই দাবি পরিবেশবিদদের।
দিল্লির এক বাসিন্দা বলেছেন, ধোঁয়াশা এতটাই ঘন যে তিনি তার আটতলা ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে নিচে রাস্তায় গাড়ি বা যানবাহন কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না এবং গাড়িগুলো দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে।
পনের বছর ধরে দিল্লিতে বসবাসরত এই বাসিন্দা বলেন, যখনই নিশ্বাস নিচ্ছি, নাকের ভেতরে একটা বার্নিং সেনসেশন- জ্বালা অনুভব করছি। আর ধোঁয়া ও ধুলো মেশানো একটা গন্ধ নাকে আসছে।
এই পরিস্থিতিতে, পরিবেশবিদদের বক্তব্য, বায়ুর গতি এখন যা, তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেও দিল্লির দূষণ কমার বিশেষ সম্ভাবনা নেই।
সূত্র: এনডিটিভি