চরম অনিয়ম, অপ্রীতিকর ঘটনা আর অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলে কমিটি গঠনের ছয় মাসের মাথায় দুই ভাগে বিভক্ত হলো স্পেনের বৃহত্তর আঞ্চলিক সংগঠন গ্রেটার সিলেট অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেন।
স্পেনে বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলা নিয়ে গঠিত বৃহত্তর সিলেটবাসীদের এই সংগঠনের কমিটি গঠন নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে সাবেক ও বর্তমান কমিটির সদস্যদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। মূলত পদ-পদবি আর অর্থ তসরুপের ঘটনা থাকলেও তা কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। আর এসব ঘটনা চরম আকার ধারণ করে গত ২৯ মে নতুন কমিটি হওয়ার পর।
সর্বশেষ বুধবার (৩০ নভেম্বর) মাদ্রিদের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অপমান ও লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে গ্রেটার সিলেট অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেন থেকে দুইজন সহ-সভাপতি ও একজন যুগ্ম-সম্পাদকসহ ৮ জন পদত্যাগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির রিগ্যান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল মালিক এমদাদ, বেলাল আহমদ, ১ম সদস্য রমিজ উদ্দিন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ আব্দুল কাইয়ুম সেলিম প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে হুমায়ুন কবির রিগ্যান বলেন, ২০০০ সালে স্পেনে বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে মাদ্রিদে গ্রেটার সিলেট জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সংগঠনটি প্রতি ২ বছর পর পর ইলেকশন কিংবা সিলেকশনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে। অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ৪ বছর কমিটিবিহীন থাকার পর মুজাক্কির সেলিম আসাদ পরিষদ পূর্ণ প্যানেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার পর উপদেষ্টা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে মূলত এই বিভক্তি। নতুন সভাপতি আব্দুল মুত্তাকিন মুজাক্কির ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম আলমের মনগড়া সিদ্ধান্তে তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। যা সম্পূর্ণ সংগঠনের নীতিবহির্ভুত। নির্বাচিত কমিটি গঠন হওয়ার পর সাবেক কমিটির কাছ থেকে পাওয়া সংগ্রহকৃত অর্থ সংরক্ষণের জন্য একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলার কথা। সেটা না করে তাদের অবৈধ ফায়দা হাসিলের জন্য তড়িঘড়ি করে এই উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়।
১ম সদস্য রমিজ উদ্দিন এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান সভাপতি রাতে ব্যবসা আর দিনে ঘুমিয়ে কাটান আর সাধারণ সম্পাদ অন্য দেশে বসবাস করে একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্তে সিলেটের প্রবীণ ও শীর্ষ নেতারা কমিউনিটিতে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন বহুবার। তাই আমাদের পদত্যাগ করা ছাড়া বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।
সংগঠনের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল মালিক এমদাদ ছয়মাসের কার্যকালে সংগঠনে স্বচ্ছতার অভাব উল্লেখ করে বলেন, হিসাব কখনোই স্বচ্ছতার সাথে সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করা হয় না। তাই ৩৫ সদস্যের কমিটির মধ্যে আমরা শীর্ষ ৮ জন আজ পদত্যাগ করেছি। যারা পদত্যাগ করেছি তারা সকলেই পুরনো সদস্য। পর্যায়ক্রমে বাকিরাও পদত্যাগ করবেন। আমাদের সকলেরই একটা সম্মান আছে। কিন্তু নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের একের পর এক হঠকারী গ্রহণ করে আমদের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। কমিউনিটিতে সিলেটের সুনাম অর্জনের চেয়ে অপমান করা হচ্ছে।
প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও স্পেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম সেলিম বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে বলেন, ইতোমধ্যে যারা পদত্যাগ করেছেন এবং স্পেনে বসবাসরত সিলেট বিভাগের সর্বস্তরের বাসিন্দাদের নিয়ে বৃহত্তর সিলেটের আদি সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, স্পেন গঠনের মধ্য দিয়ে সকল অন্যায় ও দুর্নীতির জবাব দেওয়া হবে।