সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে জাতীয়তাবাদী যুবদলের নবগঠিত ৭ ইউনিয়ন কমিটি স্থগিত করে পুনর্গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় বাদাঘাট ইউনিয়ন কমিটি স্থগিতের দাবিতে উপজেলার বাদাঘাট বাজার এলাকায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন যুবদলের পদবঞ্চিত নেতারা।
সমাবেশে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, উপজেলার নবগঠিত সাত ইউনিয়ন যুবদলের কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে গঠনের সাংগঠনিক বিধান ছিল। কিন্তু এই নিয়ম উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে টাকার বিনিময়ে আওয়ামী ফরমায়েশী লোকদের পদপদবী দিয়ে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর পদবঞ্চিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন, মামলা, কারাভোগের শিকার প্রকৃত ত্যাগি ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা।
সমাবেশে উপজেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ডা. এস কে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা আজ উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের পদ ভাগিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কমিটিগুলোতে আওয়ামীপেশী লোকজনকে স্থান দিচ্ছে। এসব গঠনতন্ত্রবিরোধী কমিটি স্থগিত করে প্রকৃত ত্যাগিদের মাধ্যমে পুনর্গঠন না করলে আমরা তৃণমূল যুবদল তাকে তাহিরপুরে অবাঞ্চিত ঘোষণা করব।’
বাদাঘাট ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুর আলী বলেন, ‘নবগঠিত বাদাঘাট ইউনিয়ন যুবদলের কমিটিতে টাকার বিনিময়ে একই পরিবারের ১১জনকে স্থান দেওয়া হয়েছে। যা গঠনতন্ত্রবিরোধী ও অসাংগঠনিক। আমরা এসব গঠনতন্ত্রবিরোধী কমিটি বাতিলের জোর দাবি জানাই।’
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বড়দল উত্তর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম শাহ্ বলেন, ‘নবগঠিত বাদাঘাট ইউনিয়ন যুবদলের কমিটিতে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে ও আওয়ামী লীগের নির্যাতন ও মামলার কারাভোগকারী নেতাদের মূল্যায়ন না করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কয়েকজন অদক্ষ ও অসাংগঠনিক লোকজনকে পদপদবী দিয়ে দল ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার আন্দেলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চলছে।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধাদের আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষে ইউনিয়ন কমিটিগুলো যোগ্যদের মাধ্যমে গঠন করতে রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছি। প্রতিটি ইউনিয়নেই একাধিক যোগ্যতা সম্পন্ন নেতাকর্মী ছিল। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও একটি পদ একাধিক নেতাকে স্থান দেওয়া সম্ভব ছিল না। এ জন্য পদবঞ্চিত প্রত্যেক নেতাকর্মীর কাছে আমি ব্যতিত। দলের এই কঠিন সময়ে বিদ্রোহ না করে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আর যারা কাঙ্খিত পদ পাননি বা পদ বঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা যুবদলের কমিটিতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে।’
সমাবেশে যুবদল নেতা আবুল কাসেমের সঞ্চালনায় ও বাদাঘাট ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম শিকদারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, বাদাঘাট ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক চাঁন মিয়া মাস্টার, উত্তর বড়দল ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি রফিকুল ইসলাম, নবগঠিত যুবদলের সহ সভাপতি এরশাদুল ইসলাম এরশাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আ. জব্বার, বাদাঘাট ৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আশু মিয়া, বাদাঘাট সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুজন মিয়া প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্য ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আজিজুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আমির শাহ্, সদস্য সাইফুল ইসলাম, দক্ষিণ বড়দল যুবদল নেতা সপন মিয়া, বাদাঘাট যুবদলের নবগঠিত কমিটির সহ সভাপতি আনোয়ার হোসেন রাজ, বড়দল উত্তর ইউনিয়ন যুবদলের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, বাদাঘাট ওর্য়াড বিএনপির সভাপতি আবু সায়েদ বেপারী, ২নং ওর্য়াড সভাপতি আজিজুর রহমান তালুকদারসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এর আগে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় তাহিরপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মো. এনামুল হক এনাম ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সায়েম স্বাক্ষরিত প্যাডে সাতটি ইউনিয়নের পুর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। যার ফলে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় পর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে যুবদল পায় নতুন নেতৃত্ব।