আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঢাকাভিত্তিক কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির নেতারা।
১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভায় দলের ১০ সাংগঠনিক বিভাগের নেতারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে এমন পরামর্শ দিয়েছেন।
তাদের পরামর্শ- আন্দোলনে সফলতা পেতে হলে রাজধানীকেন্দ্রিক কর্মসূচি দিতে হবে। ঢাকার প্রতি জোর দিতে হবে। বৈঠকে অংশ নেওয়া ১০ বিভাগের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়গুলো উঠে আসে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ১ অক্টোবর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত গুলশানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বিএনপির ১০ বিভাগীয় পর্যায়ের নেতাদের মতবিনিময় হয়। এই মতবিনিময়ে সবগুলো বিভাগের জেলার নেতারা অংশগ্রহণ করেন। মতামত দেন। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেন।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, চারদিনে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে উঠে আসা প্রস্তাব ও পরামর্শগুলো বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনা করতে গত বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) রাতে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সেই বৈঠকে বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনার সারাংশ নিয়ে কথা বলেছেন কমিটির সদস্যরা।
১ অক্টোবর খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা জেলা ও মহানগর কমিটি, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম মহানগরের নেতারা ঢাকায় সমাবেশ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই জেলাগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, ঢাকা কর্মসূচি সারাদেশে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। সে কারণে ঢাকায় কর্মসূচি দেওয়া ও বাস্তবায়ন করা গেলে সারাদেশে উৎসাহ সৃষ্টি হবে।
ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয় ২ অক্টোবর। এই জেলাগুলোর নেতারাও কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। বিগত দিনে আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় আগামী দিনের আন্দোলনে আরও বাছাই নির্ভর হওয়ার জন্য নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। একই দিন অনুষ্ঠিত সভায় সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জের নেতারা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রশংসা করে কর্মসূচি আরও জোরালো করার প্রস্তাব করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) সৈয়দ এমরান সালেহ বলেন, ‘আমরা মতবিনিময়ে সারাদেশে কর্মসূচি জোরদার করার পক্ষে মত দিয়েছি। ঢাকা রাজধানী—এখানে আন্দোলন করতে হবে। কারণ ঢাকা থেকেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে সারাদেশে।’
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের ভাষ্য, ঢাকাভিত্তিক কর্মসূচি যেন বেশি থাকে, তার কথা আমরা বলেছি। সারাদেশের মানুষ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে, বলেও মনে করেন প্রিন্স।
৪ অক্টোবর কুমিল্লা, রংপুর, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ পর্বেও ঢাকাকেন্দ্রিক কর্মসূচি দেওয়ার ওপর জোর দেন নেতারা। ৪ অক্টোবর বরিশাল, ফরিদপুর, ঢাকা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি নেতারা। তাদের প্রস্তাবের মধ্যেও রাজধানীতে আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলছেন, তৃণমূলের প্রস্তাবের মধ্যেই বিএনপি ঢাকাকে কেন্দ্রে রেখে কর্মসূচি প্রণীত করছে। ইতোমধ্যে সারা শহরে কর্মসূচি হচ্ছে। অধিকাংশ কর্মসূচি সফল হয়েছে। সামনের দিনে আরও গতি বাড়বে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঢাকার মুভমেন্টকে স্ট্রং করতে হবে। গতবার তো এটা ফেল করেছিলো। ফলে, ঢাকাকে স্ট্রং করতে হবে এটা ন্যাচারাল ফেনোমেনা। এবারও ঢাকায় মুভমেন্ট হচ্ছে— দিজ ইজ নট সাফিশিয়েন্ট। ফলে তারা চাইছে (বিভাগীয় নেতারা) ঢাকাকে স্ট্রং করতে হবে।’
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা যাবে না।’