লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসাস্থল সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কম খরচে সরকারি সেবা পেতে এখানে ভিড় লেগেই থাকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীদের। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফার্মেসি এবং ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে রোগী ও তাদের স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সেবা নিতে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে রীতিমতো জোর-জবরদস্তি, টানাহেঁচড়া এখানকার নিয়মিত চিত্র। অনেক সময় দালালদের কথামতো, তাঁদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাবে রোগ নির্ণয় না করালে কিংবা ফার্মেসি থেকে ওষুধ না কিনলে তোপের মুখে পড়তে হয় রোগী ও স্বজনদের।
দালালদের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ আটজন এমবিবিএস চিকিৎসক কর্মরত আছেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। তাঁদের পরিবর্তে সিপি হিসেবে পরিচিত কায়সার আহমেদ সাগর, আমিরুল ইসলাম ও রেজাউল করিম শামীম (ডিএমএফ ইন্টার্নি) প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। জরুরি বিভাগে সেবার জন্য কোনো রোগী এলে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে অবস্থান করা একাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালেরা নজরদারি করতে থাকেন হাসপাতালে আসা রোগীদের ওপর। রোগীর জন্য ব্যবস্থাপত্র প্রস্তুত হওয়া মাত্রই দালালেরা তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ফার্মেসিতে নেওয়ার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই নানাভাবে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়।
বিরক্তি প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন বলেন, হাওরাঞ্চল থেকে তিনি রোগী নিয়েছে এসেছেন। দালালেরা এদিক-ওদিক টানাহেঁচড়া করেছেন।
৩১ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবায় সম্পৃক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, কমপ্লেক্স সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্যক্তি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকদের যোগসাজশে কমিশনভিত্তিক একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরেই উৎপাত চালিয়ে আসছে। এই সিন্ডিকেট একচেটিয়া ডায়াগনস্টিক ও ওষুধের ব্যবসা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রোগী টানতে দালালেরা নানা রকম কৌশল অবলম্বন করেন।
জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঈন উদ্দিন আলমগীর বলেন, ‘হাসপাতালে যখন চিকিৎসক-সংকট ছিল, তখন আউটসোর্সিং ওয়ার্ডবয়, ইন্টার্নিসহ অন্যরা নিয়োজিত ছিলেন। এখন যেহেতু নতুন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেহেতু তাঁদের আর প্রয়োজন নেই। দালালের বিষয়ে আগে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’