ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-কে এখনও ‘ট্রপিক্যাল সাইক্লোন’ বলা হচ্ছে। তবে বাতাসের গতিবেগ বাড়লে এটি ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমে’ রূপ নিতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে এমন তথ্যই মিলছে। সবশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পায়রা বন্দর থেকে সিত্রাং ৩৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ব্যসের এই ঝড় সহসাই উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে বলা হচ্ছে, সিত্রাংয়ে বাতাসের একটানা গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত ট্রপিক্যাল সাইক্লোনে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। অন্যদিকে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১০ হলেই সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারে সিত্রাং।
সাধারণত ট্রপিক্যাল সাইক্লোন আয়তনে বিশাল হয়। এগুলো তৈরি হতে প্রচুর পরিমাণে গরম পানির প্রয়োজন হয়। একমাত্র ইকুয়েটরের কাছাকাছি ৫-৩০ ডিগ্রির মধ্যে মহাসাগরে এমন গরম অবস্থা বিরাজ করে। বাংলাদেশ সাব-ট্রপিক্যাল অঞ্চলে পড়েছে।
আবহাওয়াবিদরা চার ধরনের সাইক্লোনের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলোর মধ্যে ট্রপিক্যাল সাইক্লোনে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমে বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার। ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে। এছাড়া এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্ট্রমে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬৬ থেকে ২২০ কিলোমিটার হয়ে থাকে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোও ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। এই সাত নম্বর বিপদ সংকেতের অর্থ হচ্ছে, বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার ঝঞ্ঝাবহুল এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে নিপতিত। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার।
ঝড়টি বন্দরের উপর বা নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখনও ট্রপিক্যাল সাইক্লোনেই আছে। তবে যেকোনও সময় এর গতি বেড়ে এটি সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া অধিদফতর আগামীকাল মঙ্গলবার ঝড়ের আঘার হানার যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ এই ঝড়ের ব্যাস ৪০০ কিলোমিটার। আর ঝড়টি এখন আছে পায়রা বন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। সে হিসেবে ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ এখন বাংলাদেশের উপকূলের একেবারেই কাছে অর্থাৎ মাত্র ৯৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এভাবে একেবার অংক করে এসব ঝড়ের বিষয়ে বলা কঠিন হবে। আমরা সর্বশেষ যে বুলেটিন দিয়েছি তাতে ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে ৮৯ থেকে ১১০ গতিবেগ হলেই এই ধরনের ঝড়কে আমরা সিভিয়ার সাইক্লোন বলি। বাংলাদেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে এর গতি বেড়ে এটি সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার শঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।
এদিকে কখন এই ঝড় আঘাত হানতে পারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঝড়টি ব্যাস ৪০০ কিলোমিটার। সে হিসেবে এখনই এই ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব পড়ছে উপকূলে। এটি যত এগিয়ে আসবে ততই প্রভাব বাড়তে থাকবে। যে গতিতে ঝড়টি এগুচ্ছে সে হিসেবে সন্ধ্যা নাগাদ মূল ঝড়ের বড় অংশ উপকূলে পৌছে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে ঝড়ের কেন্দ্র পৌছাতে ভোর এবং বাকি অংশ অতিক্রম করতে করতে আগামীকাল দুপুর হয়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ঝড়ের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টি প্রায় সারাদেশে হচ্ছে। অনেক আবহাওয়াবিদ মনে করেন, বৃষ্টি বেশি হলে ঝড়ের গতিবেগ কমে যায়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তখন কম হয়।
এদিকে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান জানান, সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে রূপ নিয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানবে। কেন্দ্র আঘাত করবে ভোরে। এই ঝড় উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মক ও ২ জেলায় হাল্কা আঘাত হানতে পারে। তবে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন