বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুটি বার্তা দেওয়া হতে পারে। সেপ্টেম্বরে আসন্ন জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যাবেন সেসময় এ বার্তা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া।
সোমবার (২১ আগস্ট) টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ায় প্রতিবেদনটি লিখেছেন পত্রিকাটির সাংবাদিক দেবদীপ পুরোহিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যাবেন। ওই সময় বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে দুটি স্পষ্ট বার্তা দিতে পারে ভারত।
প্রথমটি হলো- বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হতে হবে। দ্বিতীয়ত আওয়ামী লীগকে সব চীনপন্থি ও ইসলামপন্থি নেতাদের বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের বেছে নিতে হবে।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার এক সূত্রের বরাতে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানায়, শেখ হাসিনার জন্য এই দুই বার্তা বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের বিষয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐকমত্যের ইঙ্গিত দেয়।
সূত্রটি জানায়, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত ও মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বড় পার্থক্য থাকলেও এবার দুই দেশ একই কথা বলছে। ভারতের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন জি-২০ সম্মেলনে যোগদানের জন্য দিল্লিতে থাকবেন তখন দুটি বার্তাই তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা সবসময় বলেছেন, তার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। তবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আমেরিকা ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো দেশটির গণতন্ত্রের ওপর সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
যদিও নয়াদিল্লি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কখনই কোনো প্রশ্ন তুলেনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই প্রথম হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, ভারত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে কোনো চিন্তা করবে না যতক্ষণ ফলাফল হাসিনার পক্ষে থাকে, কারণ নয়াদিল্লি ঢাকাকে তার প্রতিবেশীদের মধ্যে সবচেয়ে ‘বিশ্বস্ত মিত্র’ হিসেবে বিবেচনা করে।
আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের অনেক ইচ্ছা পূরণ করেছে- ইসলামি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দমন থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য চলাচলের অনুমতি দেওয়া পর্যন্ত। নয়াদিল্লির জন্য প্রাথমিক উদ্বেগের কারণ হলো, চীনের সঙ্গে হাসিনা সরকারের আপাত নৈকট্য। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই ফ্যাক্টরটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একই অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় ও মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে আলোচনায় যা প্রাধান্য পেয়েছে তা হলো-
১. বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোতে চীনপন্থি ও ইসলামপন্থিদের ব্যাপক উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উভয়পক্ষই। দিল্লি সফরে হাসিনাকে এ উদ্বেগের কথা জানাবে ভারত।
২. উভয়পক্ষই একমত হয়েছে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়িত করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। শেখ হাসিনার সফরে ভারত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
৩. ভারত ও আমেরিকা একমত হয়েছে যে, বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের অন্যতম প্রধান দাবি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামোতে কোনো স্থান নেই।
৪. শেখ হাসিনা সরকারকে দুর্নীতি ও ব্যাংক খেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমস্যাটি মোকাবিলা করতে হবে; যা সাধারণ বাংলাদেশিদের জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।
৫. ভারতীয় কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসবে, যা এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে এবং ভারতের নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত বাড়বে।
৬. নয়াদিল্লির প্রতিনিধিরা মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক ঘোষিত বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে তাদের ভারতের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
ভারতের নিরাপত্তা সংস্থার সূত্রটি জানিয়েছে, এ বিষয়গুলোই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে এক অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
ঢাকার একটি সূত্রের বরাতে টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা রাজনীতিতে আগ্রহী নয়, তারা জাতি গঠনের প্রক্রিয়ায় যোগ দিতে উত্সাহিত হবে। ক্ষমতাসীন দলের চক্রের প্রতি আনুগত্য নয়, জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে সঠিক প্রার্থী বাছাই আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করবে। সবশেষে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।