বিগত সময়ে দায়িত্বরত পিপিরা টাকা গ্রহণ করলেও সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আশিক উদ্দিন আশুক ব্যতিক্রমী এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আদালতে তার চেম্বারের মূল দরজায় সাইনবোর্ডের মতো করে লিখে রেখেছেন, ‘পিপিকে টাকা দিতে হয় না’।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আশিক উদ্দিন আইনপেশার পাশাপাশি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। গত ৩ নভেম্বর তিনি পিপি হিসেবে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিযুক্ত হন।
আদালতে পিপির চেম্বারে বসে দায়িত্ব পালনের পক্ষকাল যেতে না যেতেই তাঁর কার্যালয়ের দরজায় সাঁটিয়ে দেয়া ‘পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কে টাকা দিতে হয় না। দয়া করে পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) নামে কাহারো নিকট টাকা দিবেন না।’লেখা দেখে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি আগের পিপিরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা নিতেন?
জানা গেছে, প্রতিটি জিআর মামলার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বাদী। এবং এসব মামলার প্রতিনিধিত্ব করেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। এর জন্য সরকার পাবলিক প্রসিকিউটরকে সম্মানি দেয়। এর বাইরে বাদী বিবাদী কারো কাছ থেকেই পিপির টাকা নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে মানা হয়নি এই নিয়ম। তাই সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নতুন পিপির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আদালতে সেবা নিতে আসা মানুষজন ও আইনজীবীরা।
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রায় এক দশক একটানা পিপির দায়িত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এরপর পিপির দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন।
সরকারি কৌঁসুলির দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে মো. আশিক উদ্দিনের। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সিলেট নারী নির্যাতন আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে সিলেট এডিএম কোর্টের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পরই আমি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হয়েছি। শত শত তরুণ , শিশু এই আন্দোলনের সময় শহিদ হয়েছে। এই শহিদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সিলেটের পিপি হয়ে আমি কি এই নির্যাতিত মানুষের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ করব?। এই টাকা গ্রহণ করার জন্য কি সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে? সিলেটের আইনজীবীরা যারা আমাকে আন্দোলন করে এই পদে বসিয়েছেন সেই আন্দোলনকে মূল্যায়ন করার জন্য ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহিদদের প্রতি কর্মের মাধ্যমে যথাযথ সম্মান জানাতে আমার অবস্থান থেকে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।’
উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর নতুন করে সিলেটের সব আদালতে ১০৩ জন পাবলিক প্রসিকিউটর, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয় আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি করা হয় সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এটিএম ফয়েজকে। এ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে সিলেট বারের আইনজীবীরাও ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। বিগত দিনে বেনিফিশারিদের অপসারণ দাবি করে তারা বিক্ষোভ করেন। পিপির কক্ষে তালাও ঝুলিয়ে দেন। এ অবস্থায় আন্দোলনের মুখে ওই নিয়োগ বাতিল নতুন পিপি হিসেবে মো. আশিক উদ্দিনকে নিযুক্ত করা হয়।