সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে এক সপ্তাহ ধরে জিম্মি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ-তে যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা থাকায় বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা দাহ্য জাতীয় খনিজ পদার্থ। এগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ না করা গেলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি রয়েছে।
এদিকে ২৩ জন নাবিক-ক্রুসহ জাহাজটি জিম্মি করার এক সপ্তাহ হতে চললেও জলদস্যুদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। এ অবস্থায় জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারের আলোচনায়ও কোনো অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করে রাখা এমভি আব্দুল্লাহ’র অবস্থান বার বার পরিবর্তন করছে জলদস্যুরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাগরে বাল্ক জাহাজে কয়লা পরিবহনে ৫ ধরনের বিপদের শঙ্কায় কিছু নিরাপত্তা পদক্ষেপ মেনে চলতে হয়। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় জাহাজের খোলের ভেতরে মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড ও অক্সিজেনের পরিমাপ নিতে হয়। নির্ধারিত মাত্রার বেশি গ্যাস জমে থাকলে তা বের করে দিতে হয়।
তারা বলছেন, বদ্ধ জায়গায় কয়লা থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছড়িয়ে পড়া মিথেনের পরিমাণ বাড়লে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ ছাড়া কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে নাবিকদের জীবনের ঝুঁকিও থাকে।
এ বিষয়ে মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিথেন খুবই দাহ্য একটি গ্যাস। যেকোনো সময় এতে আগুন ধরতে পারে। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে আমরা কাউকে ডেকে সিগারেটও খেতে দেই না। কারণ সামান্য সিগারেটের আগুন থেকে সেখানে বড় বিস্ফোরণ হতে পারে।
‘প্রতি ২৪ ঘণ্টায় কয়লার কনসেন্ট্রেশন মেপে দেখতে হয়। এটি বিস্ফোরণের মাত্রার উপরে উঠে গেলে ফোর্স মেইনটেইন করতে হয়। ফোর্স মেইনটেইন করে মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস বের করে দিতে হয়। এটা ২৪ ঘণ্টার একটা প্রক্রিয়া।’
মেরিটাইম খাতে কয়লাবাহী জাহাজ ঝুঁকিপূর্ণ কার্গো হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের জাহাজ তদারকির জন্য বিশেষ নির্দেশনা থাকলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, ‘জাহাজে যেহেতু আমাদের টেকনিক্যাল পারসন আছে, সুতরাং জলদস্যুরা সবসময় এই করণীয়টুকু করবে। আমরা মনে করছি স্বার্থরক্ষা, জাহাজ ও আবাসস্থল নিরাপদ রাখার স্বার্থে নাবিকদের সহযোগিতা করবে জলদস্যুরা।’
এর আগে সোমালিয়ার দস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছিল একই মালিকের এমভি জাহানমণি নামের একটি জাহাজ। মো. ইদ্রিস নামে ওই জাহাজের এক নাবিক জানিয়েছেন, তাদের যখন বন্দি করে রাখা হয়, তখন কোনো কাজ করতে দেয়া হয়নি। এর ফলে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে, সার্বক্ষণিক তদারকির অভাবে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কয়লায় বিম্ফোরণ ঘটতে পারে।
প্রসঙ্গত, মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগর থেকে মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা।