সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীতে জেগে ওঠেছে বিশাল চর। পরিবর্তন হয়ে গেছে নদীর গতিপথ। দীর্ঘদিন থেকে খনন না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে নাব্যতা হারাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের আন্তসীমান্ত নদী কুশিয়ারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর প্রায় ২০/২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় মিঠা পানির ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। পলি পড়ার কারণে নদীর প্রবাহ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে প্রাক মৌসুমি বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধি, নদীর নাব্যতা হ্রাস এবং কৃষি ও জনবসতি ভাঙনের কবলে পড়ছে। তাছাড়া প্রতিবছর আগাম বন্যায় কবলিত হচ্ছেন নদীতীরের বাসিন্দারা।
স্থানীয় লোকজন জানান, দেশ স্বাধীনের আগে ও পরে কুশিয়ারা নদী দিয়ে জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ বাজারে আজমিরীগঞ্জ থেকে বড় বড় লঞ্চ ও নৌযানে করে মালামাল নিয়ে আসা হতো। বিশাল এলাকার মানুষের যাতায়াতের প্রধান বাহনও ছিল নৌযান। এতে খরচ যেমন কম ছিল তেমনি যাতায়াতের সুবিধাও ছিল অনেক। অথচ বর্তমানে কুশিয়ারায় নাব্যতা না থাকায় নৌপরিবহন ব্যবস্থা এখন আর নেই। নদী খননের অভাবে বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে চর। তা ছাড়া কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে যুক্ত নদীগুলো পরিণত হয়েছে ‘মরা খালে’। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাওর এলাকার মানুষ।
এদিকে, কুশিয়ারার চর জেগে ওঠার পাশাপাশি নদীর পাড় কেটে নিয়ে যাচ্ছে কিছু লোক। প্রতি বছর নদী ভেঙ্গে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর। দ্রুত নদী খনন করা না হলে জেগে ওঠা চর দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন বাসিন্দারা।
স্থানীয় কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বাসিন্দা জানান, কুশিয়ারা নদীতে ছোট-বড় ডলফিন, শুশুক, ইলিশসহ অনেক প্রজাতির মাছ দেখা যেত। নদীতে চলত পাল তোলা নৌকা লঞ্চ ও স্টিমার। জাহাজও চলত বছরজুড়ে। ঘাটে-ঘাটে ছিল নৌকার ভিড়। ছিল কুলি-শ্রমিকদের কোলাহল। কুশিয়ারা নদীকে কেন্দ্র করে রানীগঞ্জ বাজার ছিল কর্মতৎপর এলাকা। কুশিয়ারা নদীর সেচের পানিতে আশপাশের এলাকায় চাষাবাদ হতো। অনেক পরিবারের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন ছিল এই কুশিয়ারা।
নদীর পাড়ের বাসিন্দা আশরাফুল আলম জিলহজ বলেন, ‘এক সময় দেখেছি বিশাল এক কুশিয়ারা। এখন তো পায়ে হেঁটে নদী পার হওয়া যায়। দ্রুত এই নদীটি খনন করা না হলে চর দখল হয়ে যাবে।’
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুক্তাদির আহমদ মুক্তা বলেন, ‘কুশিয়ারা নদী নাব্যতা হারিয়েছে। যে নদীতে এক সময় জাহাজ, বড় বড় স্টিমার চলতো সেই নদীতে এখন নৌকা চলাচলই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নদীর গতিপথ নষ্ট হচ্ছে, নাব্যতা হারাচ্ছে। উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে চর পড়ছে নদীগুলোতে। দেখা দিচ্ছে আগাম বন্যা। শুধু তাই নয়, ছোট ছোট শাখার নদীর সঙ্গে হাওরগুলোও ভরাট হয়ে গেছে। ফসলি জমিতে জেগেছে চর। বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরও দখল করে স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘বর্তমানে নদী খননে পাইপ লাইনের যে প্রকল্প চলমান রয়েছে তাতে কুশিয়ারার নাম নেই। তবে আগামীতে এ নিয়ে কাজ করা হবে।’