সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে দুই শিক্ষকের দ্বন্দে চার বছর ধরে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে জগন্নাথপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জগন্নাথপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালিক বদলী হয়ে চলে যান। এরপর থেকেই জগন্নাথপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদটি খালি। শুন্য পদে জগন্নাথপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তখনকার সহকারী শিক্ষক গনেশ চক্রবর্তী ও দক্ষিণ হবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর আবেদন করেন। এরপর শুরু হয় রশি টানাটানি।
একপর্যায়ে সিলেট বিভাগের উপপরিচালক মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গনেশ চক্রবর্তীকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের নির্দেশ দেন। কিন্তু এই আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেন গোপাল চন্দ্র দাস। মামলার কারণে নতুন কাউকে উক্ত পদে নিয়োগ করতে পারেনি শিক্ষা অফিস। একারণে ৪ বছর ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি খালি।
এই বিষয় নিয়ে প্রশাসনে কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দুই শিক্ষকে নিয়ে বসলে কেউ ছাড় দিতে রাজি হন নি। তাই এই দুই শিক্ষকের দ্বন্দে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির এক শিক্ষক বলেন, তারা দুজনই অন্য দুইটি বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন, বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন। মাঝখানে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক না থাকায় সহকারী শিক্ষকদের তদারকি, শ্রেণি কার্যক্রম, পর্যবেক্ষণ, নিয়মিত পাঠদানসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়।
২০১৯ সালে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব পাওয়া বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকায় আমরা নানান সমস্যায় পড়ছি। আমি পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করেছি।
তিনি বলেন, দায়িত্ব পালন করলেও আমরা প্রধান শিক্ষকের সরকারি সুযোগ-সুবিধা কিংবা মর্যাদার দিকে থেকেও কোনো সরকারি নির্দেশনা পাইনি। আমরা হতাশার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করছি। এদিকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদও শেষ। সব মিলিয়ে সমস্যায় আছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ হবিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, আমি সিনিয়র শিক্ষক, সিনিয়র হিসেবে মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে যাওয়ার জন্য আবেদন করি। আমি সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় মামলা করি, মামলা চলমান রয়েছে।
অপরদিকে বাদশা মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গণেশ চক্রবর্তী বলেন, জগন্নাথপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলাম। প্রধান শিক্ষক হিসেবে শূন্যপদে আবেদন করি। সিলেট বিভাগের উপ পরিচালক আমাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার আদেশ জারি করেন। পরে গোপাল চন্দ্র দাস আদেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মানিক লাল দাস বলেন, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। মামলাও নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না। আমরা দুই শিক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম সমাধানের জন্য। এখনো সমাধান হয়নি। আশা করি সমাধান হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মহোন লাল দাস, বলেন প্রধান শিক্ষক পদ শুন্য আদালতে মামলা রয়েছে। নিষ্পত্তি না পর্যন্ত কিছু করা যাবে না।