খুদেজা বিবির বয়স সত্তরের বেশি। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল তথ্যে তিনি হয়ে গেছেন তাঁর ছেলের বয়সী! জন্মনিবন্ধনে তাঁর জন্ম সাল ১৯৫৩ লেখা হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল করে সেটি লেখা হয়েছে ১৯৭৪ সাল। আর এই ভুলের মাশুল হিসেবে জীবনের শেষ সময়ে এসে তাঁর বয়স্ক ভাতার কার্ডটি বাতিল হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ঐয়ারকোনা গ্রামে ঘটেছে এমন ঘটনা।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ঐয়ারকোনা গ্রামের মৃত আব্দুল গনির স্ত্রী মোছা. খুদেজা বিবি বয়স্ক ভাতার কার্ডটি বরাদ্দ পান। প্রায় ১২ বছর ভাতার অর্থ উত্তোলনও করেছেন তিনি। কিন্তু গত বছর অনলাইন ডাটাবেইসে জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁর বয়স কম উল্লেখ করা হয়। আর এ কারণে বাতিল হয়ে যায় তাঁর ভাতার কার্ডটিও। ফলে বিগত ৬ মাস ধরে বিধবা ওই নারী বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রে বৃদ্ধা খুদেজা বিবির জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে ১০ নভেম্বর ১৯৭৪। আর তাঁর একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলের জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫। সে অনুযায়ী ছেলে মো. আব্দুল মুহিত তাঁর মায়ের চেয়ে মাত্র ১০ মাসের ছোট!
এদিকে বয়সের এমন পার্থক্য সংশোধন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবারটিকে। নানা কাগজপত্র জমা দেওয়ার বেড়াজালে পড়েছেন তারা। যার ফলে বয়স কম-বেশির কারণে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধা খুদেজা বিবি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর আমার বিয়ে হয়। যুদ্ধের সব কিছু এখনো মনে পড়ে। এতদিন ভাতা পাইলাম। এখন মরার সময় ওষুধের টাকাই পাই না।’
বৃদ্ধার প্রতিবন্ধী ছেলে আব্দুল মুহিত বলেন, ‘আমার বয়সই ৫০ হয়ে যাচ্ছে। মায়ের বয়স ৭০ এর উপরে হলেও কার্ডে ভুল করে ৪৯ করে দিয়েছে। একই দিনে মা-ছেলে ভোটের ছবি তুলেছিলাম। মা-ছেলের বয়স কি সমান হয়? এটা কোনো কথা হলো? এ ভুলের জন্য মায়ের ভাতার কার্ডটাও বাতিল হয়েছে। এখন খুব কষ্টের মাঝে আছি।’
মুহিত আরও বলেন, ‘গত ৬ মাস থেকে সংশোধনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছি। বর্তমানে আবেদনটি সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আছে। এই কাগজ, ওই কাগজ, কত কাগজ দিলাম। কিন্তু এখনো জাতীয় পরিচয়পত্রটি ঠিক হলো না।’
জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুদ্দীন বলেন, ‘২০০৮ সালের ডাটা এন্ট্রিতে এমনটা হতে পারে। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে সব কাগজপত্র নিয়ে গেলে সংশোধন হয়ে যাবে।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রে নির্ধারিত বয়সের কম হওয়ায় কারণে অনলাইনে ডাটা করা যায়নি। ফলে তাঁর বয়স্ক ভাতার কার্ডটি বাতিল হয়েছে। তবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন হলে পুনরায় তাঁর ভাতার কার্ড ইস্যু করা হবে।’
সিলেট জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিঞা বলেন, ‘আমরা সব কাগজপত্র দেখে সংশোধন করে দেবো।’