সিলেটের জকিগঞ্জে প্রবাসীর বাড়ির জায়গা দখল, ভাঙচুর, লুটপাট, মারধর ও গাছ কর্তনকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন প্রবাসী শাহীন আহমদ।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের ইলাবাজ গ্রামের মৃত ইমাদ উদ্দিনের ছেলে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী শাহীন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, সরকারি রাস্তা দখল করার পর গ্রামের একটি দাঙ্গাবাজ চক্র এবার তার বাড়ির জায়গা দখলে নেমেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তিনি দেশ থেকে চলে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
তার পক্ষে ভাগ্নে নাহিদ হোসেন চৌধুরী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় বাংলাদেশ পিপলস পার্টির মহাসচিব তালুকদার মকবুল হোসেন, আত্মীয় ইমরান আহমদসহ কয়েকজন স্বজন উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৫ সেপ্টেম্বর ভোররাতে অর্ধশতাধিক লোক নিয়ে প্রতিপক্ষ হোসেন আহমদ, তার চাচাতো ভাই শহিদ আহমদ ও তাদের সহযোগীদের নেতৃত্বে শাহীন আহমদের বাড়িতে প্রবেশ করে, যাদের অধিকাংশই ভাড়াটে। তারা দা, কুড়াল, করাত, লোহার রড, গ্রান্ডার মেশিন, লাঠিসোঁটা ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন জাতের ২৮৪টি গাছ কর্তন এবং পাকা রান্নাঘর গুড়িয়ে দেয়। দরজা-জনালাও ভাঙচুর করে। এতে প্রায় দশ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। বাধা দিতে গেলে তার বৃদ্ধা মা হানুফা বেগম ও ভাইয়ের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাহিদা ও ভাতিজা খালেদকে মারধর করে দখলবাজরা।
তিনি বলেন, ৯৯৯ নম্বরে কল করার দেড় ঘণ্টা পর জকিগঞ্জ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা ছিল নিরব। অনেককে ঘটনাস্থলে পেয়েও নিষেধ বা আটক করেনি পুলিশ। তাদের তাণ্ডবলীলার কিছু দৃশ্য বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড রয়েছে।
বক্তব্যে শাহীন আহমদ উল্লেখ করেন, ওইদিন রাতে তিনি বাদী হয়ে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ এজাহার পরিবর্তন করে। মামলাটি দ্রুতবিচার আইনে হওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। উল্টো তিনদিন পর তাদের বিরুদ্ধে একই ধারায় পাল্টা মামলা রেকর্ড করে পুলিশ।
হোসাইন আহমদ ও তার স্বজনরা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি রাস্তা দখল ও সেখানকার গাছ কর্তন করে আসছে উল্লেখ করে শাহীন আহমদ জানান, ইলাবাদ মৌজার জেএল-১১০, খতিয়ান-১, এসএ দাগ নং-৮৫, বিএস দাগ-১৫০৭, ১৫১০, ১৪৫১ এর প্রায় ৫২ শতক সরকারি রাস্তারকম ভূমি রয়েছে। পাঠানচক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামন থেকে রাস্তাটি শুরু হয়েছে। গ্রামের লোকজন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতেন। প্রতিপক্ষ তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ও দখল করে তাদের বাড়ির অংশ করে সংযুক্ত করে ফেলেছে। সরকারি রাস্তার প্রায় ৬ লাখ টাকার গাছ কেটে নিয়েছে হোসেনরা। সরকারি রাস্তা বন্ধ ও গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গ্রামের লোকমান আহমদ নামের এক ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর আবেদন করেন। এছাড়া তিনি একই বছরে স্থানীয় সুলতানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের কাছে ও পুলিশ সুপার বরাবরে একই বিষয়ে অভিযোগ দেন। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জায়গা সংক্রান্ত বিরোধ প্রসঙ্গে বলা হয়, শাহীন আহমদের খালা শরিফা বেগমের কাছ থেকে ২০২১ সালে ৮ শতক জায়গা কিনেছেন বলে দাবি করেন হোসেনরা। কিন্তু বাড়ির ইজমালি ৬৬ শতক জায়গার মধ্যে যে ৮ শতক জায়গা তারা ক্রয় করেছেন বলে দাবি করেন, কোনো অংশে তা উল্লেখ নেই। ইজমালি সম্পত্তির কোনো বাটোয়ারা হয়নি। এ নিয়ে মামলা চলছে। এ অবস্থায় কোনো আইনের বলে হোসেন জোরপূর্বক শতাধিক লোক নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে জায়গা দখল করতে আসেন? এ জায়গার বিরোধ ছাড়াও হোসেনদের দাদা সিকন্দর আলী ১ শতক জায়গা ১৯৫৬ সালের রেকর্ডে কৌশলে তার নামে করিয়ে নেন। ১৯৯১ সালে আবার সেই জায়গার মধ্যে আধা শতক শাহীনের পিতার কাছে বিক্রি করেন। আবার সেই আধাশতক জায়গা (দাগ নং-১৫১৯) বিএস রেকর্ডে ২৯ জনের নামে রেকর্ড করিয়ে নেয় হোসেন আহমদের পিতা গংরা। বিষয়টি জায়গার পর রেকর্ড সংশোধনের জন্য ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন শাহীন।
একজন প্রবাসী হিসেবে শাহীন আহমদ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনে আবেদন করেছেন উল্লেখ করে জানান, সরকারি রাস্তা দখল ও যাতায়াত বন্ধ করে রাখার পর অন্যায় ও গায়ের জোরে তার বসতবাড়ির অংশবিশেষ দখল করে রাস্তা বানাতে চান হোসেন। এজন্য দলবল নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন।
রাজনৈতিক মদদে এসব দখলবাজ অপকর্ম করছেন দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মামলাটি দ্রুতবিচার আইনে তদন্তের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।