বছরটা ছিল চ্যালেঞ্জের, এরমাঝেই বছরজুড়ে অবকাঠামোগত দিকে অভূতপূর্ব সাফল্যের সাক্ষর রেখেছে সরকার। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে উচ্চাভিলাষী ইশতেহার রচনা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার, তার শেষ প্রান্তিকের কর্মকাণ্ড দেখা গিয়েছে বছরজুড়ে। ২০২৩-এ এসে ক্রমাগত সেসব কাজের সমাপ্তি টেনেছে শেখ হাসিনার সরকার। পদ্মা সেতুতে শেষ পর্যায়ের স্পর্শ দিয়ে শুরু করা বছর শেষ হয়েছে ঢাকা মেট্রোরেলের সব টার্মিনাল চালু করে এটিকে পূর্ণ মাত্রায় কর্মক্ষম করার মধ্য দিয়ে।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে শেষ হয়েছিল খ্রীষ্টীয় ২০২২ সাল। সেখান থেকে শুরু করে অনেক অপূর্ণতা আর অপ্রাপ্তিকে আশায় রেখেই বিদায় নিলো ২০২৩ সাল।
করোনা মহামারি-পরবর্তী বৈশ্বিক সংকট কাটাতে না কাটাতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো দানবীয় অর্থনৈতিক সংকটে গোটা বিশ্ব ভুগেছে বছরজুড়ে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। এর মধ্যেও প্রাপ্তি আর অর্জনে আগামী দিনের পথ মসৃণ করেছে ২০২৩।
রাজনৈতিক উত্তাপ, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, মুদ্রামানের আশঙ্কাজনক পতন- সব মিলিয়ে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের থেকে শুরু দেশের সাধারণ জনগণ কেউই বছরজুড়ে চিন্তামুক্ত থাকতে পারেননি।
রাজনৈতিক অস্থিরতা :
২০২৩ সালের প্রথমার্ধ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রদীপ একপ্রকার নিষ্প্রভ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে তা জ্বলে ওঠে। অবশ্য তা সবার অনুমিতই ছিল। কারণ ২০২৪ সালের প্রথম মাসেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
বছরের শুরুটা দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বিএনপি শুধু গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখলেও শেষ অংশে রাজপথে সক্রিয় থেকে তারা সারা দেশে নিয়মিত মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।
তবে ২৮ অক্টোবর থেকে তারা মূল ধারার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফেরে। ওইদিন রাজধানীতে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেদিন দলটির নেতা-কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করলে নির্বাচনি অঙ্গনে বিএনপির ভিত্তি খানিকটা নড়ে যায়। নাশকতার অপরাধে গ্রেপ্তার হতে থাকেন দলটির তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একপ্রকার ঘোমটা টেনে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে বিএনপিকে। এর মধ্যে তারা হরতাল-অবরোধের টানা কর্মসূচি দিয়ে গেছে বছরের শেষ পর্যন্ত। এসব কর্মসূচি চলাকালে সারা দেশে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, এমনকি এসব ঘটনায় হতাহত হয়েছে বহু মানুষ।
তবে শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি দলটি। তবে তাদের বেশকিছু নেতা দল ছেড়ে তৃণমূল বিএনপি নামে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। কেউ কেউ আবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
আওয়ামী লীগও এবারের নির্বাচনে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। একই আসনে দলীয় প্রতীক ‘নৌকার’ প্রার্থী ছাড়াও দলের অন্য নেতাদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে প্রত্যেক আসন উন্মুক্ত করে দিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি :
২০২৩ সালে দেশের কূটনীতিতে সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ। বিষয়টি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সবাই নড়েচড়ে বসে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা কীভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন তা দেখতে মুখিয়ে ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তি-সংস্থা থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ। তবে বিষয়টি শুরুতে যেভাবে সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বছরের শেষে।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা :
ভূ-রাজনৈতিক সংকট আর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার জোর হাওয়া বয়ে গেছে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে। ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারেই টালমাটাল হয়ে উঠেছিল। নিকট অতীতের সব চিত্র একেবারে উল্টে দিয়ে এ বছরের অর্থনীতির ধারা একবার উজানে উঠেছে তো পরক্ষণেই দিয়েছে ভাটায় টান।
২০২২ সালে দেশের রিজার্ভ সেই যে নামা শুরু করেছিল, তা ২০২৩ সালে কেবল নেমেছেই। এর মধ্যে দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে কঠিন সব শর্ত মেনে সরকারকে নিতে হয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ।
রেমিট্যান্স খাতেও আশানুরূপ ফল পেতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। মূলত হুন্ডি ব্যবসায়ীদের লাগাম টানতে ব্যর্থ হয়ে বৈদেশিক আয়ে ইতিবাচক গতি ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। রেমিট্যান্স প্রবাহ এক মাসে বেড়েছে তো পরের মাসেই কমে গেছে।
এদিকে রিজার্ভ সংকটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রপ্তানি খাতেও। বৈদেশিক লেনদেনের জন্য পর্যাপ্ত এলসি খুলতে পারেননি দেশের ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পোশাক খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি :
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বছরজুড়ে দেশে মূল্যস্ফীতির পারদ পাহাড় চূড়ায় উঠে বসেছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকেই ৯ শতাংশের ওপর ছিল দেশের মূল্যস্ফীতি। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে তা সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে ওঠে। ওই মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতিও ছিল সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এটি নিয়ন্ত্রণে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েও তা পুরোপুরি কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। আর এর নেতিবাচক প্রভাবে ভুগেছে দেশের ক্ষুদ্র থেকে শুরু করে আমদানিকারক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা, চিনি ও ভোজ্যতেলের অকল্পনীয় মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। নিত্যপ্রয়োজনী পণ্যের দামে এমন অস্বাভাকি বৃদ্ধির কারণে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট ছিল অবর্ণনীয়।
তবে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে যেখানে স্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির হার ১ থেকে ২ শতাংশ, সেখানে ২০২৩ সালে তাদেরকেও ৮-৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কষ্টভোগ করতে দেখা গেছে।
ডলার সংকট ও দামে রেকর্ড :
২০২৩ সাল জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ডলারের বাজার। গত দুই বছরের মধ্যে এ বছর ডলারের মূল্য প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রিজার্ভ সংকট, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় আশানুরূপ না আসায় ডলারের দাম বেড়েছে হু হু করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশের মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বার বার দাম বেঁধে দিলেও খোলাবাজারে তার কার্যকারিতা ছিল না বললেই চলে। ২০২২ সালে ৮০ টাকার আশপাশে থাকা ডলারের মূল্য বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছলেও বছর শেষ হতে হতে তা ১০৫ থেকে ১০৭ টাকার মধ্যে নেমে আসে। সেখান থেকে ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার সময়ে এসে তা আরও বেড়ে খোলাবাজারে প্রায় ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
স্বর্ণের দামে রেকর্ড :
২০২৩ সালে স্বর্ণের দাম যে অংকে বৃদ্ধি পেয়েছে তা আগে কখনও দেখা যায়নি। এ বছর প্রথম এই ধাতুর মূল্য ভরিপ্রতি লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, দাম বাড়ার নতুন নতুন রেকর্ড হয়েছে স্বর্ণে।
এ বছর ২৯ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। এর মধ্যে ১১ বার দাম কমানো এবং ১৮ বার দাম বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সবশেষ ২৪ ডিসেম্বর স্বর্ণের দাম বেড়ে ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকায় পৌঁছায়, যা এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
রুপার দামেও রেকর্ড করে ২০২৩ সাল। ফলে বিয়েসহ দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বর্ণ ও রুপার যে ব্যবহার, তাতে লাগাম টানতে হয়েছে বেশিরভাগ পরিবারকে।
চ্যালেঞ্জের মাঝেও যত অর্জন :
কঠিন সব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে বছর পার করতে হলেও অবকাঠামোগত দিকে অভূতপূর্ব সাফল্যের সাক্ষর রেখেছে সরকার। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে উচ্চাভিলাষী ইশতেহার রচনা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার, তার শেষ প্রান্তিকের কর্মকাণ্ড দেখা গিয়েছে বছরজুড়ে।
২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে সমৃদ্ধি-অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ শীর্ষক নির্বাচনি ইশতেহারে বাংলাদেশের ভেতর-বাহির পাল্টে ফেলার এক মহাপরিকল্পনার জানান দেয় আওয়ামী লীগ। ২০২৩-এ এসে ক্রমাগত সেসব কাজের সমাপ্তি টেনেছে শেখ হাসিনার সরকার। পদ্মা সেতুতে শেষ পর্যায়ের স্পর্শ দিয়ে শুরু করা বছর শেষ হয়েছে ঢাকা মেট্রোরেলের সব টার্মিনাল চালু করে এটিকে পূর্ণ মাত্রায় কর্মক্ষম করার মধ্য দিয়ে।
পদ্মা সেতু :
দেশের স্বাধীনতার পর থেকে যত বড় বড় অর্জন, তা ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখতে হলে শুরুতেই আসবে পদ্মা সেতুর নাম। ২০২২ সালে যান চলাচলের জন্য মুক্ত করে দিলেও সেতুটি থেকে পুরোপুরি টোল আসা শুরু হয় ২০২৩ সালের শুরুতে।
সেতুটি নির্মাণচেষ্টা বানচাল করতে দেশি-বিদেশি শত ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও তা সাকার রূপ ধারণ করেছে। এর চেয়েও বড় অর্জন হচ্ছে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে বাঙালি জাতির শক্তি ও সামর্থ্যের প্রমাণ দেখিয়েছে সরকার।
পদ্মা রেলসেতু :
পদ্মা সেতুতে রেল লাইন চালু করার বিষয়টি এক সময় অসম্ভব বলে মনে হলেও সেই অসম্ভব কাজটিও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ২০২৩ সালে। এ বছরের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ উদ্বোধন করা হয়। পদ্মার দুপার তো বটেই পুরো দক্ষিণবঙ্গকে ঢাকার সঙ্গে রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করার দুয়ার উন্মোচন করে দিয়েছে এই রেলসেতু।
কর্ণফুলী টানেল :
চট্টগ্রামের খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করে এ বিষয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ে টানেল (কর্ণফুলী টানেল) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেলটি ইতোমধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এ টানেলের ফলে চট্টগ্রমে কর্ণফুলীর দুই পাড়েই স্থাপিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পাবে নতুন গতি।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে :
সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হয়। এই সড়ক দিয়ে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছতে এখন সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট, যা যানজটের কারণে আগে প্রায় এক ঘণ্টার মতো লাগত। সম্পূর্ণ এক্সপ্রেসওয়ে অর্থাৎ তেজগাঁও থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত আগামী বছরের জুনে চালু করার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে :
মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফ্লাইওভার নামে দেশের বানিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামে উদ্বোধন করা হয়েছে নগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর এই এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হয়। এক্সপ্রেসওয়ের কারণে নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগছে মাত্র ২০ মিনিট যা আগে ছিল ঘণ্টার বেশি সময়কাল।
ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন :
২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশন বহুল প্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্প উদ্বোধনের ফলে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগের দুয়ার খুলে গেছে।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র :
২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে সারা দেশকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার মহাপরিকল্পনা হাতে নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন ছিল বাড়তি বিরাট পরিমাণ বিদ্যুৎ যা দেশেই উৎপাদন করতে কয়েক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছে সরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মাতারবাড়ী ‘আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপানের সহযোগিতায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত এই প্রকল্পের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ও ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে ২০২৪ সালে। জ্বালানি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের টার্গেট অনুযায়ী অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে- তা এই মেগা প্রকল্পটির মাধ্যমে অর্জিত হবে।
মেট্রোরেল :
দেশের মানুষের, বিশেষ করে রাজধানীবাসীকে আধুনিক নগর জীবনের স্বাদ দিয়েছে মেট্রোরেল। শহরের কেন্দ্র থেকে একেবারে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত মাথার ওপর দিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো মেট্রো টেনের কল্যাণে নগরজীবন ও ভবিষ্যত নগর পরিকল্পনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতে শুরু হয়েছে। একদিকে মানুষের সময় যেমন বাঁচাচ্ছে এই আধুনিক নগরব্যবস্থার সুবিধাটি, তেমনি নগরের আবাসন, অর্থনীতি ও নগর সম্প্রসারণ প্রকল্পে ভাবনার নতুন খোরাক যুগিয়েছে মেট্রোরেল।
উত্তরা থেকে মেট্রোরেলে চড়ে মাত্র ৪০ মিনিটে নগরবাসী পৌঁছে যাচ্ছে মতিঝিল। বাংলাদেশে মূলত আধুনিক দেশের গোড়াপত্তন ঘটিয়েছে ঢাকা মেট্রোরেল।
২০২৪ সাল শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা। নতুন এসব চিন্তার বাস্তবায়ন ঘটাতে আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ- এই কামনায় স্বাগত ২০২৪ সাল।