চট্টগ্রাম মহানগরে ওয়াসার পানির হাহাকার, ক্যাবের ক্ষোভ

প্রচন্ড তাপদাহে যখন দেশ পুড়ে যাচ্ছে, পানির চাহিদা যখন বেড়ে গেল তখন চট্টগ্রাম ওয়াসায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

নগরের প্রায় অর্ধেক এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। ওয়াসার দাবি, কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর অনেক নেমে গেছে। এ কারণে হ্রদের পানি ছাড়া হচ্ছে না। এর প্রভাবে হালদার পানিতে লবণাক্তা বেড়েছে। কর্ণফুলী নদীতে শেওলা জমা, কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে যাওয়া, কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে সমুদ্রের পানি প্রবেশের কারণে এতে ওয়াসার পানির উৎপাদন কমে গেছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এ সংকটের সমাধান হবে না।

এ ছাড়া হালদার পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় শেখ রাসেল ও মোহরা পানি শোধনাগার থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এমন বাস্তবতায় একদিকে পানির জন্য হাহাকার, অন্যদিকে মানুষ সুপেয় পানি পাচ্ছে না। সুপেয় পানির জন্য মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বেসরকারী পানি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে পানি কিনে পান করতে হচ্ছে। গৃহস্থলির কাজসহ দৈনন্দিন কাজে পানি প্রাপ্যতা না থাকায় মানুষের ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। তাই জরুরিভাবে চট্টগ্রাম নগরীতে সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি। চট্টগ্রামে সুেপয় পানির ভয়াবহ সংকটে অতিষ্ঠ জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যহত হবার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উপরেক্ত দাবি জানান।

৭ মে ২০২৩ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুরু থেকেই ওয়াসা লবণাক্ততার বিষয়টি গোপন করে এসেছে। শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রামের ওয়াসার পানিতে লবণের বিষয়টি আরো দু-এক বছর আগেই আঁচ করা গিয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসা সতর্ক হয়নি, যার খেসারত এখন জনগণকে দিতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা লবণাক্ততা ও পানির সংকটের কারণে নগরের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ ভোগান্তিতে আছে বললেও প্রকৃত অর্থে এই সংকটে অর্ধেকের বেশি নগরবাসী কষ্ট পাচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, নগরবাসী বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ওয়াসার লবণাক্ত পানি নিয়ে ভোগান্তিতে আছেন। পানি পরিশোধন করলেও লবণ যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় নালার দুর্গন্ধযুক্ত, ময়লা ও কালো পানি পাচ্ছেন নগরবাসী। কেউ দূরদূরান্তের পুকুর ও গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে আনছেন। কেউ পানি কিনে রান্না ও খাওয়ার কাজ সারছেন। গোসলসহ অন্যান্য কাজ করতে পারছেন না। ওয়াসার বেশির ভাগ লাইন পুরোনো হওয়ার কারণে এমনিতেই সংকটে থাকতে হয় গ্রাহকদের। লাইনে লিকেজ বা ছিদ্রের কারণে পানি নষ্ট হয়। এখন সংকট আরও প্রকট হয়েছে। সেখানে ওয়াসা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েই ক্ষান্ত। কার্যকর কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। অধিকন্তু নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহন ও পানির মূল্য বাড়াতে নতুন পরিকল্পনায় ব্যস্ত। ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদ ও সরকারের পক্ষে তদারকি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকাও রহস্যজনক। সংকটে কারও তৎপরতা দৃশ্যমান না হওয়ায় হতাশাজনক।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এমন নাজুক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নগরবাসী চরমভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। মানুষ ওয়াসার পানি সরবরাহ নিয়ে চরম ভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছে। নিরাপদ পানি সংগ্রহে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। এমনিতে বিভিন্ন এলাকায় পানির সরবরাহ কমে গেছে। যেটুকু আসছে, তা-ও লবণের কারণে মুখে নেওয়া যাচ্ছে না। এ পানি পান করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিবছর ঘুরতে না ঘুরাতেই পানির দাম বাড়ে, উন্নয়ন প্রকল্পেও হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়, কিন্তু নগরবাসীকে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এরচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে। কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই লবনাক্ততা পরিশোধনে ব্যবস্থা গ্রহন করলে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি থেকে রেহাই পেতো।