চট্টগ্রামে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী। আক্রান্তদের অনেকের শরীরে মিলেছে কলেরার জীবাণু। চিকিৎসকদের ধারণা, চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে থাকতে পারে কলেরার জীবাণু। তবে রোগের উৎপত্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতে গবেষণা শুরু করেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি থেকে এ রোগ ছড়াচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) চট্টগ্রামে এসেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি দল। সাত সদস্যের এ দল শনিবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকে ওয়াসাসহ বিভিন্ন খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করবেন।
বিআইটিআইডি হাসপাতাল সূত্র জানায়, এই হাসপাতালে ৪০ জন ডায়রিয়া রোগী বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। এছাড়া গত পাঁচ দিনে (সোমবার থেকে শুক্রবার ৮টা পর্যন্ত) হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৩৪ জন। এর মধ্যে শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন। বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছেন ৪০ জন। বুধবার ভর্তি হয়েছেন ৬৯ জন। মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছেন ৫৫ জন ও সোমবার ভর্তি হয়েছেন ৪৭ জন।
বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে এই হাসপাতালে ২০ থেকে ২২ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসাধীন থাকেন। বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন। আমরা দেখছি তারা শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নন, অনেকে কলেরার জীবাণু বহন করছেন। সোমবার ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ২২ জনের নমুনা পরীক্ষায় সাত জনের কলেরা শনাক্ত হয়। মঙ্গলবার ১৮ জনের নমুনায় ১০ জনের কলেরা শনাক্ত হয়। বুধবার ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এখনও তাদের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘হঠাৎ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বিআইটিআইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেশিরভাগ ডায়রিয়া রোগী চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দা। এর মধ্যে বেশি রোগী রয়েছেন নগরীর ফ্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা, হালিশহর ও উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার। আক্রান্তদের অনেকের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আক্রান্তরা বলেছেন, তারা ওয়াসার পানি পান করেন। ওয়াসার পানি থেকে এ রোগ ছড়াচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি টিম চট্টগ্রামে এসেছে। শনিবার থেকে তিন দিন পানির নমুনা সংগ্রহ করবে ওই টিম। ওয়াসার পানির নমুনা পরীক্ষার পর এর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া বলেন, ‘আইইডিসিআর’র সাত সদস্যের টিম শুক্রবার চট্টগ্রাম এসেছেন। তারা প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন। শনিবার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করবেন। সাত সদস্যের টিমে আছেন ডা. মো. ওমর ফারুক, ডা. সোনাম বড়ুয়া, ডা. ইমামুল মুনতাসির, ডা. সাদিয়া আফরীন, ডা. মো. আনোয়ার হোসেন, মো. আজিজুর রহমান ও মো. আমিরুল ইসলাম।
টিমের সদস্য ডা. সোনাম বড়ুয়া বলেন, ‘শুক্রবার আমরা চট্টগ্রাম এসেছি। শনিবার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করবো। এরপর আইইডিসিআর’র ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ডায়রিয়ার কারণ জানা যাবে। নমুনা সংগ্রহ করতে কতদিন সময় লাগে তা এখন বলা যাচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহ শেষ হওয়ার পর আমার ঢাকায় ফিরে যাবো। পরে ফল জানাবো।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘ডায়রিয়া আক্রান্তের জন্য ওয়াসার পানি দায়ী নয়। অন্য কোনও কারণে আক্রান্ত হতে পারে তারা। নগরীর কিছু এলাকার লোকজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জেনে আমরা ওয়াসার সব পাইপলাইন ঠিক আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখেছি। আমাদের পাইপলাইনের কিংবা পানির কোনও সমস্যা নেই। পানির মান ঠিক আছে। আমরা পানি পরীক্ষা করে দেখেছি। পানিতে কোনও জীবাণু পাওয়া যায়নি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা টিউবওয়েলের কিংবা ড্রামভর্তি পানি কিনে পান করেন। বলা যায়, আক্রান্তদের অধিকাংশই ওয়াসার পানির সংযোগের নেটওয়ার্কের বাইরের বাসিন্দা।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন