গোলাপগঞ্জে নারীর ‘আত্মহত্যা’ : স্বামীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নুরুল ইসলাম

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ‘হারপিক খেয়ে’ আফিয়া খাতুন (৪৫) নামে এক নারীর ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় স্বামীসহ ৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।

গত শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে আফিয়া খাতুনের বোনের ছেলে মঞ্জুর আহমদ (৩৭) বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ ওইদিন অভিযান চালিয়ে মামলার ৩ নম্বর আসামি আফিয়া খাতুনের স্বামীর ছোট ভাই নজরুল ইসলামকে (৪৭) গ্রেপ্তার করেছে।

মামলায় আসামিরা হলেন- আফিয়া খাতুনের স্বামী উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের ঘোষগাঁও টিলাবাড়ি গ্রামের মৃত মখদ্দছ আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম (৫৫), তার ভাই ফখরুল ইসলাম (৫০), নজরুল ইসলাম (৪৭), জিয়াউল ইসলাম (৪৩), ফখরুল ইসলামের স্ত্রী সাকিয়া বেগম (৪০) ও নজরুল ইসলামের স্ত্রী পপি বেগম (৩৫)।

মামলা সূত্রে জানা যায়, আজ থেকে ২৪ বছর পূর্বে নুরুল ইসলামের সাথে আফিয়া খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ওই নারীর সন্তান না হওয়ায় স্বামীসহ মামলার বাকি আসামিরা বিভিন্ন সময় ওই নারীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। বিভিন্ন সময় আসামিরা ওই নারীকে প্রাণে হত্যার হুমকিও প্রদান করতেন। ওই নারীর স্বামী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। প্রবাস থেকে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তার চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার ওই নারীর পিতার বাড়ি থেকে বহন করা হয়।

জানা যায়, মামলার আসামিরা বিভিন্ন সময় আফিয়া খাতুনকে পিতার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন। এছাড়া আফিয়া খাতুনের কোনো সন্তান না হওয়ায় আসামিরা বিভিন্ন সময় খারাপ কথাবার্তা বলতেন।

ঘটনার দিন ২৪ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মামলার আসামিরা একই উদ্দেশে আফিয়া খাতুনকে মানসিকভাবে হয়রানি ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। ওইদিন আসামিরা ওই নারীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেন। একপর্যায়ে আসামিদের প্ররোচনায় আফিয়া খাতুনতাহার বসতঘরে ঢুকে বিষপান করেন।

আরও জানা যায়, আফিয়া খাতুন বিষপান করার পর আসামিরা তাকে হাসপাতালে না নিয়ে বসতঘরের বারান্দায় এনে রাখেন। খবর পেয়ে মামলার বাদী ও স্বাক্ষীগণ ঘটনাস্থলে এসে দেখেন ওই নারীর মুখ দিয়ে লালা বের হচ্ছে। তখন সাথে সাথে তারা ওই নারীকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সকাল ৮টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার বাদী মঞ্জুর আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা আমার খালাকে নির্যাতন করে আসছে। তাদের প্ররোচনায় আমার খালা বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন। বিষপান করার পর সাথে সাথে আসামিরা যদি আমার খালাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেন তাহলে তার মৃত্যু হতো না। আমরা আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. নূর মিয়া বলেন, মামলা দায়েরের পর এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।