রাজধানীর গুলিস্তান বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড কাউন্টারের পাশে একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত) ১৮ জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়েছে।
এদিকে ভয়াবহ এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১১৭ জন। যেখান থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন- মো. সুমন (২১), ইসহাক মৃধা (৩৫), মুনসুর হোসেন (৪০), মো. ইসমাইল (৪২), আল আমিন (২৩), রাহাত (১৮), মমিনুল ইসলাম (৩৮), নদী বেগম (৩৬), মাঈন উদ্দিন (৫০), নাজমুল হোসেন (২৫), ওবায়দুল হাসান বাবুল (৫৫), আবু জাফর সিদ্দিক (৩৪), আকুতি বেগম (৭০), মো. ইদ্রিস (৬০), নুরুল ইসলাম ভূইয়া (৫৫), হৃদয় (২০), সম্রাট ও সিয়াম (১৮)।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, আহত মানুষদের নিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ভেতরে প্রবেশ করছে। জরুরি বিভাগের সামনে থেকে শুরু করে বাইরের সড়ক পর্যন্ত আহত এবং নিহতদের স্বজনদের আহাজারি চলছে।
ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার ও নার্স থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরা হতাহতদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর হতাহতদের একে একে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালে আনা আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা। দেয়াল ভেঙে এসে পড়ে রাস্তায়। বহু মানুষ উড়ে এসে রাস্তায় পড়েছেন। সড়কে থাকা বহু গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পার্শবর্তী ভবনগুলোও। ভেঙে পড়েছে অনেক ভবনের কাঁচ। বাসযাত্রী থেকে শুরু করে পথচারী পর্যন্ত আশেপাশে থাকা সবাই হতাহত হয়েছেন। ঘটনার পর রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সসহ যে যেভাবে পেরেছেন আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ভবনটি বাণিজ্যিক হওয়ায় ভেতরে অনেকের থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ভবনটির ভেতরে আরও আহত কেউ আটকা পড়েছে কি না, তা খুঁজে দেখছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-মিডিয়া) শাহজাহান সিকদার জানান, ফায়ার সার্ভিসের ৭ ইউনিট ভবন থেকে অনেককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে।
ফায়ার সার্ভিসের সদরদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাজাহান শিকদার জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে গুলিস্তান বিআরটিসি কাউন্টারের দক্ষিণ পাশে ৭ তলা ভবন (নিচতলায় সেনিটারি দোকান) এবং তার পাশের ৫ তলা একটি সেনেটারি মার্কেট ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো ভবন ধসে পড়েনি। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।
আল আমিন নামে পাশের মার্কেটের এক কর্মী বলেন, ‘হঠাৎ বিস্ফোরণের পর বের হয়ে দেখি রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন বহু মানুষ। ৮ জনকে আমি নিজে ভ্যানে উঠিয়ে মেডিকেলে পাঠিয়েছি। তারা সবাই মারা গেছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।’
এছাড়া আরও বহু লোক আহত হয়ে পড়ে ছিলেন। যে যেভাবে পেরেছে তাদের মেডিকেলে পাঠিয়েছে। রাস্তায় থাকা সব গাড়ি, পথচারী, রিকশা, ভ্যান- সবকিছুই বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান আল আমিন।
বিস্ফোরণের ঘটনায় সদরঘাট থেকে সাভারগামী একটি বাস চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। ঘটনাস্থলে থাকা ওয়াহিদুজ্জামান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাসটি সদরঘাট থেকে সাভার যাচ্ছিল। এটি বিস্ফোরণের সময় ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। বাসটির নাম সাভার পরিবহন। এর নম্বর ঢাকা মেট্রো গ ১৫-৪৩২৮। বাসটিতে ৪০-৫০ জন যাত্রী ছিলেন। ভেতরে থাকা প্রায় সবাই আহত হয়েছেন।’
একই সময় রাস্তার উল্টো পাশে যত গাড়ি ছিল সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান ওয়াহিদুজ্জামান।
সুন্দরবন কুরিয়ার অফিসে কাজ করেন তোফাজ্জল ও আল আমিন। কাজ শেষে অফিস থেকে নিচে নামতেই আকস্মিক বিস্ফোরণ। এতে তারা দুজন উড়ে গিয়ে পড়েন রাস্তায়। এরপর তারা আর কিছুই বলতে পারেন না। তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফিরিয়ে আনা হয় বিআরটিসি অফিসের সামনে একটি মার্কেটে। সেখানে কথা হয় তাদের সঙ্গে। আকস্মিক বিস্ফোরণের ঘটনায় বাকরুদ্ধ আল আমিন ও তোফাজ্জল কিছুই বলছিলেন না।
তবে তাদের উদ্ধারকারী এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুজনই ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল। চারদিকে শুধু কান্নার আহাজারি। আল আমিন ও তোফাজ্জল আমার পূর্ব পরিচিত। তাই ওদের আগে উদ্ধার করি। ভ্যানে করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ড্রেসিং শেষে দোকানে নিয়ে আসি। সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মালিক ঘটনাস্থলে আসছেন। তাদের কাছে আহত দুজনকে হস্তান্তর করা হবে।