পরিস্থিতি বুঝে গাছপালাও সাড়া দেয়। জগদীশ চন্দ্র বসুই এটা আবিষ্কার করে গেছেন। এতদিন পর ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ফের দেখলেন, সমস্যায় পড়লে বিশেষ এক ধরনের শব্দও তৈরি করে গাছ। মানুষের কানে সেই শব্দ ধরা পড়ে না। তবে র্যাপিং বাবল ফোটানোর মতো ‘পপ’ শব্দটা ধরা পড়েছে গবেষকদের বিশেষ মাইক্রোফোনে।
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেকদিন পানি দেওয়া না হলে এ ধরনের শব্দ করছে টমেটো ও তামাক গাছ। গত ৩০ মার্চ এ গবেষণার বৃত্তান্ত প্রকাশ হয়েছে সেল জার্নালে।
গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক লিলাক হাদানি জানান, নীরব-নিথর ফসলের মাঠেও অবিরাম শব্দ হতে থাকে। ওই শব্দেই লুকিয়ে থাকে তথ্য। কিছু প্রাণী হয়তো ওই শব্দগুলো শোনে। তার মানে গাছের সঙ্গে প্রাণী বা গাছের সঙ্গে গাছের অনেক ধরনের যোগাযোগ হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
সাউন্ডপ্রুফ অ্যাকাউস্টিক চেম্বারে শক্তিশালী মাইক্রোফোনে গবেষকরা সুস্থ টমেটো গাছের পাশাপাশি অনেকদিন পানি দেওয়া হয়নি এমন গাছেরও শব্দ রেকর্ড করেন। পরে সফটওয়্যার ব্যবহার করে তারা পরিষ্কার ধরতে পারেন যে, পানি না পাওয়ার কারণে গাছ যে ধরনের শব্দ করছে, তা সুস্থ গাছের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। শব্দটা অনেকটা বাবল ফোটানোর ‘পপ’ শব্দের মতো বলে জানান তারা। টমেটো, তামাক গাছ ছাড়াও গবেষকরা এ ধরনের শব্দ শুনেছেন ভুট্টা, গম, আঙুর ও ক্যাকটাসেও।
শব্দ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে গবেষকরা এখনো পরিষ্কার ধারণা না পেলেও তারা ভাবছেন, গাছের কাণ্ড ও শিরা-উপশিরায় বয়ে চলা পানি ও বাতাসের মধ্যেই এ ধরনের বাবল তৈরি হয়। শব্দটা ৪০ থেকে ৮০ কিলোহার্টজ তরঙ্গে থাকে। যেখানে আমাদের শ্রবণসীমা হলো ২০ হার্টজ থেকে ২০ কিলোহার্টজ।
গবেষকরা এখন যা জানার চেষ্টা করছেন, তা হলো গাছের এই শব্দ শোনে কারা? বিশেষ করে কীটপতঙ্গ বা পাশের অন্য কোনো গাছ ওই শব্দ শুনে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়?
প্রসঙ্গত, শব্দের সঙ্গে গাছের সম্পর্কের প্রমাণ মানুষ প্রথম পায় ১৯৫০ সালে। ওই সময় এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, গাছকে ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত শোনানো হলে সেটা ঘন-সবুজ হয়ে বেড়ে ওঠে। পরে ১৯৭০ সালের এক গবেষণায় গাছপালাকে এক পাশে রক মিউজিক এবং অন্য পাশে ক্ল্যাসিক্যাল ও জ্যাজ মিউজিক শোনানো হয়। কিছু সময় পর দেখা যায়, গাছগুলো ক্ল্যাসিক্যাল সংগীতের দিকেই ঝুঁকে পড়েছে।