দৃশ্যত সূর্যই সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, মহাবিশ্বের সবচেয়ে ঝলমলে বস্তুটি আসলে একটি কোয়েজার, যা আমাদের সূর্যের চেয়ে অন্তত ৫০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল। কিন্তু অনেক দূরে থাকায় খালি চোখে তাকে আমরা দেখতে পাই না।
প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীরা এত শক্তিশালী এ কোয়েজার আবিষ্কার করেছেন, যার কেন্দ্রে রয়েছে সর্বগ্রাসী কৃষ্ণগহ্বর। এ কোয়েজারের ভর আমাদের সৌরজগতের একমাত্র নক্ষত্র সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৭০০ কোটি গুণ বেশি; প্রতিদিন এটি সূর্যের আকারের সমান বস্তু ভক্ষণ করে। কিন্তু অনেক দূরে হওয়ায় আমরা এটি দেখতে পাই না। এ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত আলো আসতে ১ হাজার ২০০ কোটি বছরের বেশি সময় লাগে।
গ্যালাক্সির উজ্জ্বল কেন্দ্র বা কোয়েজারটি ২ দশমিক ৩ মিটার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে অস্ট্রেলিয়ার কোনাবারাব্র্যান থেকে প্রথম দেখতে পান অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এএনইউ) বিজ্ঞানীরা। পরে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (ইএসও) বৃহৎ টেলিস্কোপ এ আবিষ্কারের সত্যতা নিশ্চিত করে। এ টেলিস্কোপের প্রাথমিক আয়নাই অন্তত ৮ মিটার প্রশস্ত।
ইউএসও, মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি, ফ্রান্সের সরবোন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এএনইউর বিজ্ঞানীদের এ আবিষ্কার নিয়ে নিবন্ধ নেচার অ্যাস্ট্রোনমি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধের প্রধান লেখক এএনইউর সহকারী অধ্যাপক খ্রিস্টিয়ান উলফ বলেন, জ্ঞাত অনুসারে এটা বিশ্বের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু; প্রতিমূহূর্তে এ কোয়েজার ব্যাপক আলো ও তাপ নির্গমন করছে।
কোয়েজারটির আলো বিচ্ছুরিত করছে একটি চাকতি মতো অঞ্চল থেকে, যার ব্যাস সাত আলোকবর্ষ পর্যন্ত। এ চাকতির ভেতরেই বস্তুগুলো কৃষ্ণগহ্বরের চারদিকে ঘুরতে থাকে। ইভেন্ট হরাইজন (কৃষ্ণগহ্বরের সীমানা এলাকা) অতিক্রম করলেই বস্তুগুলো গহ্বরে হারায়। ঘূর্ণয়নকালে একটি বস্তুর সঙ্গে অন্য বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায় বিপুল পরিমাণে আলো ও তাপ উৎপন্ন হয়।
খ্রিস্টিয়ান উলফ বলেন, এটা এক সুবৃহৎ ঝোড়ো ক্ষেত্র। সেখানে তাপমাত্রা ১০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস; চারপাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে এবং এত দ্রুত গতিতে বাতাস বইছে যে তা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেবে মাত্র ১ সেকেন্ড। তিনি বলেন, এ ঝোড়ো ক্ষেত্রের ব্যাস সাত আলোকবর্ষব্যাপী, যা আমাদের সৌরজগৎ থেকে পার্শ্ববর্তী গ্যালাক্সি আলফা সেঞ্চুরিতে থাকা সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রের দূরত্বের চেয়েও ৫০ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। তবে এর রেকর্ড যে চিরকাল টিকে থাকবে– এমন নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারছেন না।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান