নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের রাজনীতির হিসেব কষে অভিবাসন নীতিমালায় কড়াকড়ি আরোপ করেছে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল সরকার। এতে বিপাকে পড়েছেন উত্তর আমেরিকার দেশটিতে পাড়ি জমানো কয়েক লক্ষ অভিবাসী ও অভিবাসন প্রত্যাশী।
আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি বছরে প্রতি মাসে গড়ে ৩৭০০ অভিবাসনপ্রত্যাশীকে সীমান্ত বা বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি ভিজিটর ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এছাড়াও কানাডায় উচ্চতর শিক্ষা শেষে দেশটিতে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার নীতিমালায় কড়াকড়ি আরোপ করায় প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রতিবাদ করছেন অভিবাসী শিক্ষার্থীরা।
ঐতিহাসিকভাবে নতুন অভিবাসী গ্রহণে কানাডা সরকার উদার মনোভাব পোষণ করে। ২০২০ সালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর কর্মক্ষম লোকবল সংকটে সহজ হয় কানাডার অভিবাসন নীতি। দলে দলে মানুষ বিভিন্ন ভিসায় পাড়ি জমাতে থাকেন উত্তর আমেরিকার উন্নত এ দেশে।
তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় অধিক সংখ্যক অভিবাসী গ্রহণের ফলে দেশটিকে আবাসনসহ নানা সংকট দেখা দিচ্ছে বলে দেশটির অধিবাসীরা মনে করছেন। সাধারণ ভোটারদের মনোভাব ট্রুডোর লিবারেল সরকারের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বিবেচনায় দলটি অভিবাসনে কড়াকড়ি শুরু করেছে বলে জানাচ্ছেন অভিবাসন ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা।
গত জুলাই মাসে ৫ হাজার ৮৫৩ জন ভ্রমণকারীকে ভিজিটর ভিসা থাকার পরেও কানাডায় প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি যা ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। সীমান্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যমতে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসেই গড়ে ৩ হাজার ৭২৭ জন ভ্রমণকারীকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
যদিও ভিসা থাকার পরও প্রবেশ প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বেড়েছে, দেশটির সরকারের অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন নীতিমালা আগের মতোই রয়েছে এবং কানাডায় ভিজিটর ভিসায় আসা ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতা আগের মতোই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এর কোন পরিবর্তন আসেনি।
কানাডার ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্যমতে চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মে ও জুন মাসে যত ভিসা অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তার চেয়েও বেশি ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২২ ও ২০২৩ সালের তুলনায় চলতি বছর অনেকাংশে কমেছে স্টাডি ও ওয়ার্ড পারমিটের সংখ্যা।
এদিকে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে পোস্ট গ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কর্মরতরা স্থায়ী নাগরিকত্ব প্রাপ্তিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে পারমিটের মেয়াদ না বাড়ানোর ব্যাপারে কানাডা সরকারের সিদ্ধান্তে চলতি বছর শেষ হতেই অন্তত ৭০ হাজার মানুষ কানাডায় বসবাসের অধিকার হারাতে বসেছেন।
প্রাদেশিক সরকারগুলো ২৫ শতাংশ কম স্থায়ী নাগরিকত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ সরকারের বিভিন্ন নীতিমালার কারণে কানাডায় উচ্চশিক্ষা শেষে কর্মরতদের পারমিটে মেয়াদান্তে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।
কানাডার অভিবাসন মন্ত্রী মার্ক মিলার গত আগস্টে বলেন, ‘কানাডিয়ানরা এমন ব্যবস্থা চায় যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। অভিবাসন বিভাগ নীতি ও পদ্ধতির একটি ন্যায্য ও অ-বৈষম্যমূলক প্রয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে জানুয়ারিতে নীতিমত কিছু পরিবর্তনের ফলে স্টাডি পারমিটের অনুমোদন তুলনামূলক হ্রাস পেয়েছে।’