সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার মাসিক আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়ন ও চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভা সোমবার (১৪ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টায় উপজেলা সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কমিটির সভাপতি নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীনের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাদিজা বেগম, থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদ সহ আইন-শৃঙ্খলা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
সভায় আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন এবং বিশেষ করে সীমান্ত এলাকার চোরাচালান প্রতিরোধে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরে বক্তব্যকালে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মুমিন চৌধুরী বলেন, উপজেলার আইন-শৃংখলার আরো উন্নয়ন, অপরাধ দমন, মাদকবিরোধী অভিযান জোরদারের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি, থানা পুলিশকে আরো কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরীন বলেন, ‘আজ ইউএনও হিসাবে আমি কানাইঘাটে যোগদান করেছি। চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রত্যন্ত ও দূর্গম এলাকায় আমি কাজ করেছি। আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়নে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যেভাবে কাজ করা দরকার সেভাবে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। যাতে করে আমরা সবাই শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন সীমান্ত এলাকায় চোরালান প্রতিরোধ, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স, অপরাধমূলক কর্মকান্ড দমন, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’ সেই সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার সহ সকল কাজে উপজেলা প্রশাসন, বিজিবি, থানা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সবধরনের সহযোগিতা করার জন্য রাজনৈতিক মহল, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরে থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম দস্তগীর আহমেদ বলেন, থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিগত মাসে নিয়মিত ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার মধ্যে চোরাচালান ও নারী নির্যাতন মামলার সংখ্যা বেশী রয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার হাবিলদার সারোয়ার সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যরা নিষ্ঠার সাথে কাজ করলেও ভারত থেকে চোরাইপথে চিনি, পাতার বিড়ি, মাদকদ্রব্য, শাড়ীসহ অন্যান্য জিনিসপত্র আসছে স্বীকার করে বলেন, চোরাচালানের সাথে অনেকে জড়িত। তাদের অনেক সোর্স রয়েছে, বিজিবি কোথায় যাচ্ছে সেটি সোর্সরা চোরাকারবারীদের খবর দিয়ে থাকে। যার কারনে চোরাচালান কর্মকান্ড বিজিবি নিয়ন্ত্রন করতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে। বিগত মাসে সুরইঘাট বিজিবি ক্যাম্প ভারত থেকে অবৈধ ভাবে নিয়ে আসা চিনি, শাড়ী, পাতার বিড়ি, মাদকদ্রব্য সহ ১কোটি ২৬ লক্ষ টাকা এবং চলতি মাসে ৭৬ লক্ষ টাকার চোরাই মালামাল আটক করেছে বলে তিনি জানান। চোরাচালান প্রতিরোধে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন বিজিবি সদস্যরা।
আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় অনেক সদস্যরা চোরাচালান বেড়েছে উল্লেখ করে তা প্রতিরোধে বিজিবি ও থানা পুলিশকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমদাদুল হক, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নবনিতা সরকার ত্বন্বি, সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. জিলানী, শিক্ষা কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্র সূত্রধর, আনছার বিডিপির সভানেত্রী কমলা আক্তার, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি নিজাম উদ্দিন সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
তবে সভায় উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সদস্য ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের কোন চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন না। চলতি মাসে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় সরকারের কয়েকটি দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সমন্বয় সভা বয়কট করেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। যার কারনে তারা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় যোগদান করেননি। তবে তাদের নিয়মিত উপজেলা পরিষদের সকল সভায় উপস্থিত করার জন্য নবাগত ইউএনও ফারজানা নাসরীন উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।