বাজারে যখন ডলারের সংকট চলছে, হু হু করে বাড়ছে দাম, ঠিক তখন ‘অশনি’ বার্তা দিল প্রবাসী আয়। হঠাৎ করে কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। সদ্য সমাপ্ত মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার এবং আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম।
বুধবার (১ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে দেশে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ডলার ৮৯ টাকা ধরে) এই অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। আর আগের বছরের মে মাসের তুলনায় এবার ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগে সব সময় বেশি রেমিট্যান্স আসে। কারণ প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের খরচের জন্য বেশি অর্থ পাঠায়। গেল মাসে একটু কম এসেছে। আগামী মাসে আবার বাড়বে, কারণ সামনে কোরবানির ঈদ। তখন আবার প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবে।
গত ২৩ মে যত খুশি তত রেমিট্যান্স পাঠানোর পথ সহজ করে দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে অনুযায়ী এখন পাঁচ হাজার ডলারের ওপরে বা ৫ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স এলেও কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। আগে পাঁচ হাজার ডলারের বেশি রেমিট্যান্সের বৈধ কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। তবে অবাধে অর্থ পাঠানোর সুযোগ দেওয়ার পরও বাড়েনি রেমিট্যান্স প্রবাহ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৬ কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৮৪ লাখ মার্কিন ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।
এদিকে দেশের মার্কিন ডলারের দামে অস্থিরতা কাটাতে এক রেট বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপেক্ষিতে গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের রেট বেঁধে দিলেও ব্যাংকগুলো আমদানিকারকদের কাছে এখনো বেশি অর্থাৎ ৯২ থেকে ৯৩ টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৫-৯৬ টাকায়।