মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আর্সেনিক মুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতাধীন ৫৪ জন মাঠ জরিপকারীদের সম্মানী বরাদ্দের ২০ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র আড়াই লাখ টাকা দিয়ে সংশ্লিষ্টরা বাকী টাকা পরিশোধে নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। ভাতার টাকা নিয়ে গত ৪ মাস ধরে চলছে টালবাহানা। টাকা প্রাপ্তির দাবীতে রোববার কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঘেরাও করেন ভুক্তভোগী জরিপকারীরা। এ ঘটনার প্রতিকার পেতে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
জানা যায়, ২০২০ সালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উদ্যোগে আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় কমলগঞ্জ উপজেলার ৯ ইউনিয়নে আর্সেনিক পরীক্ষার জন্য শর্তসাপেক্ষে মোট ৫৪ জন নলকুপ পরীক্ষক/তথ্য সংগ্রাহক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
নিয়োগকৃত জনবলকে প্রতি ২ জনের ১টি টিম করে ১টি ইউনিয়নে মোট ৩টি গ্রুপে ৬ জন তথ্য জরিপকারী নিয়োগ দেয়া হয়। তারা প্রতি ইউনিয়নে ২ হাজার ৫শতটি নলকুপ তথ্য সংগ্রহের টার্গেট দেয়া হয়। প্রকল্পটি ২০২০ সালে বাস্তবায়ন করা কথা থাকলেও করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালে জানুয়ারিতে প্রকল্প সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। তথ্য সংগ্রহকারীরা প্রতি টিবওয়েল গণনায় ভাতা ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে প্রতিজন তথ্য সংগ্রাহক ৪২৩টি টিবওয়েল ভাগে পড়ে। একজনের ভাতার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৩০০ টাকা।
চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যই তথ্য সংগ্রহকারীরা ৯টি ইউনিয়নে জরিপ কাজ শেষ করে কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজ বুঝিয়ে দেন। গত ৬ মার্চ তথ্য সংগ্রহকারীদের ৯টি ইউনিয়নের টিম প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে প্রথম দফায় ৫৪ জনের মধ্যে ভাতা ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিতরণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু গত প্রায় ৪ মাস ধরে তথ্য সংগ্রহকারীরা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুজন সরকারের কাছে ধরনা দিয়ে আসলেও নানা অজুহাতে বকেয়া ২০ লক্ষ টাকা সন্মানী ভাতা প্রদানে টালবাহানা শুরু করেন। বরাদ্ধকৃত অর্থ এখনও আসেনি এই অজুহাত দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করছেন। ফলে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তথ্য সংগ্রহকারীদের মধ্যে।
বিক্ষুব্ধ তথ্য সংগ্রহকারীরা রোববার (২৬ জুন) বিকালে পাওনা ভাতা পরিশোধের দাবীতে কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ঘেরাও করেন। ঘেরাওকালে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের লোকজন সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না দেয়ায় কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বিক্ষুব্ধ তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ী ফিরে যান।
কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তথ্য সংগ্রহকারী রাজু দত্ত জানান, প্রথমে ৬ জনকে ১৭ হাজার টাকা দেয়া হয়। পরে দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের টাকা দেয়া হচ্ছে না। আমরা জানি জুন মাসে সকল সরকারী বরাদ্দ উত্তোলন হয়ে থাকে। হয়তো আমাদের ভাতার টাকাও উত্তোলন করা হয়েছে। টাকা বরাদ্দ হয়নি এমন অজুহাত মানতে নারাজ তথ্য সংগ্রহকারীরা।
কমলগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো. সুজন সরকার বলেন, তাদের প্রথম দফায় কিছু টাকা দেয়া হয়েছে। আগামীতে আসলে বাকীটা দেয়া হবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত উদ্দীন লিখিত আবেদন পাওয়া কথা স্বীকার করেন বলেন, বিষয়টির ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।