জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সর্বকালের সেরা তিন বাঙালির একজন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কাজী নজরুল আজও প্রাসঙ্গিক। তার এই প্রাসঙ্গিকতা চিরদিন থাকবে।’
শনিবার (২৭ আগস্ট) সকালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাজী নজরুল শুধু সমকালের নন, তিনি সর্বকালের। কবির অসাম্প্রদায়িক এবং মানবতাবাদী চেতনার জন্য আমরা আজকে তাকে বেশি স্মরণ করবো। অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। এদেশে একদল অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে সাম্প্রদায়িকতার সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক। গণতন্ত্র আর মুক্তিযুদ্ধের নামে এই বর্ণচোরা মুক্তিযোদ্ধা এবং গণবিরোধী শক্তিকে চিহ্নিত করে প্রতিরোধ এবং পরাজিত করতে হবে।’
বিএনপির সরকার পতনের বিষয়ে কাদের বলেন, ‘এটা নতুন কথা নয়, ১৩ বছর ধরে শুনে আসছি। বিএনপি দেশ আর জনগণকে নিয়ে ভাবে না। তাদের লক্ষ্যই ক্ষমতা। টেক ব্যাক বাংলাদেশ, আবারও হাওয়া ভবন, আবারও ধ্বংসলীলা আর জঙ্গিবাদ; এটাই তাদের লক্ষ্য। সরকার পতন দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।
এসময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আ ফা ম বাহাউদ্দীন নাসিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কবির সমাধিতে প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। এরপর বাংলা একাডেমি থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নুরুল হুদা বলেন, ‘কাজী নজরুলকে আধুনিক কবি বলা হয়। উনি আধুনিক ত বটেই তিনি উত্তর আধুনিক কবি। তার আদর্শ তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ এখন নজরুলকে নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি তাকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে। নজরুলের দেওয়া গণতান্ত্রিক শক্তি, জাতীয় শক্তি অসাম্প্রদায়িক শক্তি আর সদাচারী শক্তির সম্মেলন করে একটি জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা প্রস্তুত আছি।’
তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আসুন, আমরা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের সদাচারী মনোভাবের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশকে একটা জাতী রাষ্ট্র আর সারা বাংলাদেশে একটা জাতি রাষ্ট্র গড়ে তুলি।’
আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়ে কবি নুরুল হুদা বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে কি নেই, সেটার আইনি লড়াই শুরু হয়েছে। আমাদের সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দেবে, সে রায় আমরা মেনে নিব। তবে আপনারা দেখুন সারা বিশ্বে জাতীয় কবির ঘোষণা দেওয়া কোনও কবি আছে কিনা। আমার মনে হয় নেই। কারণ বড় নেতা থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চা পর্যন্ত যারা যাকে জাতীয় কবি হিসেবে গ্রহণ করেন তিনিই জাতীয় কবি। ১৯২৯ সালের বাঙালির জাতীয় কবি আর ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃত হয়ে আছেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তিনি সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি। বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুলের মধ্যে একটি অসাধারণ সখ্যতা ছিল। বঙ্গবন্ধুই মূলত কবি নজরুলকে দরিদ্রপীড়িত জীবনাচার থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।’
বঙ্গবন্ধু ও কবি নজরুল; দুজনই মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক ও উদার জীবন দর্শন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কবির সাহিত্য সম্ভার অনেক বিশাল। তার সাহিত্য সম্ভারে নানাবিধ মূলবোধ ও নানা ধরনের ভাবদর্শন। তার মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার স্পৃহা ছিল। তার মধ্য আছে ধর্মীয়মূল্যবোধ প্রতিপালনের ইঙ্গিত। তার কবিতা, গান মানুষকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেবে, বিশ্বের যেকোনও প্রান্তের যেকোনও মানবগোষ্ঠীকে যেকোনও পরিস্থিতিতে তার ভাবদর্শন মানুষ অনুসরণ করবে। তার মধ্য দিয়েই এ কবি অমর হয়ে থাকবেন।’