কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চমকের নাম ছিল মরক্কো। আফ্রিকান দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো তারা নকআউট পর্বে ওঠে। শুধু তাই নয়, সেমিফাইনাল পর্যন্ত ওঠার যাত্রাপথে তারা বেলজিয়াম, স্পেন ও পর্তুগালের মতো দেশকে হারায়। যার মাধ্যমে তারা ফুটবল বিশ্বের নতুন জায়ান্ট দল গড়ারই ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্বকাপে হতাশাজনক বিদায়ের ঘোর এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি পাঁঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। বিশ্বকাপের পর প্রথমবার মাঠে নেমেও তারা মরক্কোর কাছে হোঁঁচট খেয়েছে।
রোববার (২৬ মার্চ) ভোর ৪টায় তাঞ্জিয়ারে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হয় দু’দল। এই ম্যাচ উপলক্ষ্যে তরুণ নির্ভর দল ঘোষণা করে ব্রাজিলের অভ্যন্তরীণ কোচ র্যামন মেনেজেস। এরপরই তিনি বিশ্বকাপ দলের অনেককে বাদ দিয়ে দল গড়ায় সমালোচনার মুখে পড়েন। টানা দুই বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায় নিয়ে কাতার থেকে দেশে ফিরেই পদত্যাগ করেন দলটির কোচ তিতে।
অন্যদিকে, এর আগেই পুরো মৌসুমের জন্য ছিটকে গেছেন নেইমার। ইনজুরির কারণে নেই দলের নিয়মিত অধিনায়ক ডি সিলভা। নতুন দলে রাখা হয়নি সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে থাকা বার্সেলোনা ফরোয়ার্ড রাফিনিয়া, আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লি ও মিডফিল্ডার ব্রুনো গুইমারেস। তবুও ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ভালো ফলের আশা নিয়েই নতুন শুরু করতে চেয়েছিল।
এদিন ভারপ্রাপ্ত কোচ মেনেজেস সম্ভাবনাময়ী পাঁচ তরুণকে আন্তর্জাতিক অভিষেক করিয়েছেন। আরেকটা কারণেও মরক্কোর বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল বিশেষ। কিংবদন্তি পেলের মৃত্যুর পর এই প্রথম ব্রাজিলের মাঠে নামা। ম্যাচের শুরুতে তাই পেলেকে স্মরণ এবং প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জার্সির পেছনেও ছিল ফুটবল-রাজার নাম। এসব উপলক্ষ্যও যেন ব্রাজিলকে উজ্জীবিত করতে পারেনি!
ম্যাচের শুরু থেকেই তুলনামূলক বেশি গতিসম্পন্ন ছিল মরক্কো। ব্রাজিলিয়ানদের থেকে বল কেড়ে নিয়ে দ্রুতই তারা আক্রমণে উঠছিল বারবার। এতে ম্যাচের মাঝপথে দু’দলের খেলোয়াড়রা একাধিকবার ঝামেলাও বাঁধিয়েছে। অবশ্য ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। ১৩ মিনিটে লুকাস পাকুয়েতার থ্রু বল পেয়ে কাছ থেকেও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি রনি।
মিনিট দশেক পর মরক্কো গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনুর ভুলে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল ব্রাজিল। আন্দ্রে সান্তোসের শট এগিয়ে আসা বুনুর হাত ফসকে পেছনে গোলমুখের দিকে চলে যাচ্ছিল। শেষমুহূর্তে পেছনে গিয়ে বল নিয়ন্ত্রনে নেন তিনি। এর দুই মিনিট পরই অবশ্য বল জালে পাঠান ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তবে আক্রমণ তৈরির সময় অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়।
২৯ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে এগিয়ে যায় মরক্কো। বিলাল এল খাননুসের কাছ থেকে বল নিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন বুফাল। ৩৬ মিনিটে সমতা ফেরানোর সুযোগ ছিল রদ্রিগোর সামনে। নেইমারের অনুপস্থিতিতে দশ নম্বর জার্সি পরা এই ফরোয়ার্ড শট লক্ষ্যে রাখতে ব্যর্থ হন।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না পিছিয়ে পড়া ব্রাজিল। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে পৌঁছে তাদের অপেক্ষা পুরোয়। তবে এতে মরক্কো গোলরক্ষকেরও ভূমিকা ছিল। তার ভুলের সুবাদে বক্সের বাইরে বল কয়েক পা ঘুরে অধিনায়ক ক্যাসেমিরোর কাছে যায়। তার শট বুনুর নাগালেই ছিল। ঝাঁপিয়ে বলের নাগাল পেলেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। সমতা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি মেনেজেসের দল। মরক্কোর আক্রমণ আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে ৭৯ মিনিটে ওয়ালিদ ছেদদিরার কাছ থেকে বল পেয়ে হাফ-ভলিতে বল জালে পাঠিয়ে দেন সাবিরি। গোলরক্ষক ওয়েভারটনের দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। দীর্ঘদিন ব্রাজিলের প্রধান গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারের জন্য পরবর্তী গোলরক্ষকরা সুযোগ পাচ্ছিলেন না। মাঝেমধ্যে ম্যানসিটি কিপার এডারসন মাঠে নামলেও ওয়েভারটনের জন্য সেটিও অসম্ভব হয়েছিল।
২-১ গোলে হারের একরাশ হতাশা নিয়েই শেষপর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয়েছে সেলেসাওদের। অধিনায়ক ক্যাসেমিরো এবং ভারপ্রাপ্ত কোচ মেনেজেসের আপাত অধ্যায়টাও শুরু হল বিবর্ণতায়।