সিলেটে চোরাই চিনি নিয়ে লঙ্কাকান্ড চলছে। বিয়ানীবাজার উপজেলার পর এবার সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জে ৪০ বস্তা চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
অভিযোগ ওঠেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান আহমদের নেতৃত্বে চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ।
এদিকে, চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্থানীয় মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদে চিনির মালিক ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যান। ফলে বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইঘাট উপজেলার আব্দুর রহিম ও ময়নুল হক নামের দুই ব্যক্তি বৃহস্পতিবার বিকেলে চারটি টমটম দিয়ে ৪০ বস্তা ভারতীয় চিনি কালিগঞ্জ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। কালিগঞ্জ বাজারে অদূরে ইছামতি ডিগ্রী কলেজের সামনে টমটমটি পৌঁছামাত্র উপজেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ ৮-১০ জন নেতাকর্মী টমটমটি আটকিয়ে চিনির বস্তাগুলো ছিনতাই করে নিয়ে যান। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদে দুই পক্ষকে নিয়ে একটি সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। কিন্তু বৈঠকে ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত হয়ে বিচার না মেনে উল্টো হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ১ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বাজারে ঢুকার সময় একটি টমটম আটকায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় কয়েকজন নেতাকর্মী টমটম থেকে চিনির বস্তা নামিয়ে নেন। এতে বাঁধা দিলে টমটম চালককে মারধরের চেষ্ঠা করা হয়।
এ বিষয়ে মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু জাফর মো. রায়হান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে চিনি ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার পর রাতে ইউনিয়ন পরিষদে সকল সদস্যের উপস্থিতিতে চিনির মালিক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। এসময় ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের এক নেতাকে টমটম চালক চিনে ফেলায় তারা উল্টো বৈঠক থেকে উঠে যান। এসময় তারা হুমকি দিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন, চিনির মালিক জানিয়েছেন তিনি সিলেট থেকে চিনি কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছে চিনি ক্রয়ের একটি রশিদও রয়েছে।
এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ বলেন, ‘চিনি ছিনতাইয়ের সঙ্গে আমি জড়িত নয়। যারা এই কাজ করেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠকে হুমকি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাজারে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারে পাশেই ইউনিয়ন পরিষদ। আমাকে বৈঠকে ডাকা হলে আমি সেখানেও বলেছি সঠিক তদন্ত করে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।’
জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। এ ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগও দেননি। অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।