ফারিয়া জান্নাত চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার বিকালে তিনি এসেছেন সিলেট নগরীর কাজিরবাজার গরু-ছাগলের হাটে। বাজারে ঘুরে ঘুরে অনেক গরুর দেখেছেন। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি গরু কিনতে পারেন নি।
তিনি বলেন, ‘কাজিরবাজারে অনেক গরু আছে। কিন্তু দাম অনেক বেশি। করোনাকালেও এতো দাম ছিলো না কোরবানির পশুতে। গতবার ২ মণ মাংস হয়েছে যে গরুতে, সেই সাইজের গরু এবার দিগুণ দাম হাঁকাচ্ছেন গরু বিক্রেতারা।’
গরু বিক্রেতা মাসুক আলী জানান, ‘আসলে বাজারে গরু দাম বেশি নয়। গত একবছর গরুর পিছনে যা খরচ হয়েছে। তার দামও উঠবে কিনা সন্দেহ আছে। গরুর লালন-পালন ব্যয় অনেক বেড়েছে। গরু বহনকারী গাড়ির ভাড়া বেড়েছে। রাস্তায় চাঁদাবাজি বেড়েছে। সব মিলিয়ে চাহিদামতো দামে গরু বিক্রয় করলেও লাভ তেমন বেশি হবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এবারের বন্যায় ২টি গরু মারা গেছে। গত এক বছর ধরে ৫টি গরু লালন-পালন করে আসছি। হঠাৎ বন্যা এসে ঘর-বাড়ি ডুবে যায়। রাস্তার পাশে গরু নিয়ে অনেক দিন থাকতে হয়েছে। বন্যায় গরুর মাঝে পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়। পশু হাসপাতাল থেকে ওষুধ এনে গরুকে খাওয়াইছি। কিন্তু ২টি গরু বাঁচাতে পারি নাই। এখন বাকি ৩টি গরু হাটে নিয়ে এসেছি। কিন্তু চাহিতামতো দাম পাচ্ছি না। অনেকেই আসছেন, দেখছেন, চলে যাচ্ছেন। কেউই গরু ক্রয় করছেন না। এবারের কোরবানির বাজারে কি আছে কপালে, তা একমাত্র আল্লাহ ভালো জানেন।”
পশুরহাট ইজারাদের কাছে কোরবানির বাজার কেমন জমছে? এমনটা জানাতে চাইলে, কাজিরবাজারের ইজারাদার সাহাদত হোসেন লুলন বলেন, ‘প্রতিবারে ন্যায় এবারও অনেক বেশি গরু বাজারে উঠেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাজার নিয়ে অনেকের অনেক রকম অভিযোগ থাকে, তাই সবকিছুতে তো কান দেওয়া যায় না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যাতে ক্রেতা-বিক্রেতারা সঠিক মূল্যে গরু কেনা-বেচা করেন। তবে এখানে কোরবানির পশুর মূল্য ঠিক করে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নাই। আলোচনার মাধ্যমেই কোরবানির পশুর মূল্য নির্ধারণ করা হয়।’
সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট মহানগরীর বাসাবাড়ি, মার্কেট ও সড়কে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। মানুষের জানমাল হেফাজতে পুলিশ বদ্ধপরিকর। এজন্য ঈদের আগে ও ছুটিতে পুরো নগরীতে চার স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। মোতায়েন করা হবে অতিরিক্ত পুলিশ।
তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই নয়, একই সঙ্গে ট্রেন বাস ও অন্যান্য যানবাহন নিরাপদে চলাচল এবং যাত্রীদের আরও বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
পশুর হাটের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিলেট মহানগরীতে ১২টি স্থায়ী ও ৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া জাল টাকা চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি পুলিশও তাদের সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করছে। নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নগরীর সর্বস্তরে টহল জোরদার করা হয়েছে। নারী পুলিশ ও সিটিএসবি’র সদস্যারা নগরীর প্রতিটি জনসমাগম এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন।
কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে নিশারুল আরিফ বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনো ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের কথা এখনও আমার কানে আসেনি। আমরা চাই সুখে-শান্তিতে সবার আনন্দপূর্ণ ঈদ কাটুক।